‘ফুলবউ’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ মুসলিম দাম্পত্য, যৌন-সংস্কার, তার প্ৰেম-অপ্রেমের দ্বন্দ্ব ও গতিশীলতার সমস্যা নিয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ ভাবিত শক্তিমান নবীন লেখক আবুল বাশার। বৈচিত্র্যময় এই সমস্যাকে নানা দিক থেকে আলো ফেলে দেখবার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি তাঁর একাধিক ছোট-বড় গল্পে। এই প্রয়াসেরই পূর্ণায়ত রূপ ‘ফুলবউ’। ‘এজিন-তালাক-বহুবিবাহ’-ভরা মুসলমান জীবনকে আধুনিক ও আধুনিকতার মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে বিচারের সাহসী, স্মরণীয় ও তাৎপর্যময় এক কীর্তি| স্মরণ করা যেতে পারে যে, শারদীয়া ‘দেশ’-পত্রিকায় প্রকাশমাত্রই এই উপন্যাস ঘটিয়েছিল বিস্ফোরণ| তালাক ও বহুবিবাহের সমস্যাকে ‘খালাস’ নামে এক অদ্ভুত ঐহিক ও আধ্যাত্মিক সমস্যার জোড়ে বাঁধা হয়েছে এই উপন্যাসে। নারী-স্বাধীনতার ‘খালাস’ নামক সূক্ষ্ম পথেও ‘জালিম’ পুরুষ কীভাবে কাঁটা ছড়িয়ে সমগ্ৰ জীবন-ব্যবস্থাকে পরিণত করে প্রহসনে, বহুবিবাহের সুতীব্র হলাহল আধুনিক জটিল জীবনকে গ্ৰাস ক’রে কীভাবে ক’রে তোলে জটিলতর, এইসব সমস্যার মোকাবিলা কীভাবে সম্ভবপর, অথবা আদৌ সম্ভবপর কিনা—দুরন্ত কৌতুহলকর এক কাহিনীর মধ্য দিয়ে সেই দিকগুলিকেই ফুটিয়ে তুলেছেন আবুল বাশার।
তাঁর জন্ম ১৯৫১ খ্রীস্টাব্দ। ছ-বছর বয়সে সপরিবার গ্রাম তাগ। মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমার টেকা গ্রামে বসবাস শুরু। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যের স্নাতক। হিন্দিভাষা-সাহিত্যেরও ডিপ্লোমা। গ্রামের স্কুলে ১০-১২ বছর চাকুরি। বর্তমান কর্মস্থল সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকা। দারিদ্র্যের চাপ আর সামাজিক বিষমতা ও পীড়ন কৈশোরেই লেখালেখিতে প্ররোচিত। উত্তীর্ণকৈশোরে, ১৯৭১ সালে, প্রথমে কবিতাগ্রন্থের প্রকাশ। নাম : ‘জড় উপড়ানো ডালাপা ভাঙা আর এক ঋতু’। পরবর্তী এক দশক লেখালেখি বন্ধ। জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে। বহরমপুরের ‘রৌরব’ পত্রিকাগোষ্ঠীর প্রেরণায় লেখালেখিতে প্রত্যাবর্তন। কবিতা ছেড়ে এবার গল্পে। প্রথম মুদ্রিত গল্প-‘মাটি ছেড়ে যায়’। তাঁর ‘ফুলবউ’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ১৩৯৪ সালের আনন্দ-পুরস্কার।