"উইটনেস টু সারেন্ডার" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল সিদ্দিক সালিক প্রণীত উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। লেখক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে আসার আগে লাহাের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ছিলেন। সাংবাদিকতার সাথেও ছিলেন কিছুকাল জড়িত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে উন্নীত হবার পর সাবেক পূর্ব-পাকিস্তানে তিনি বদলি হয়ে আসেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের জনসংযােগ অফিসার হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযােগ। অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র সময়কাল তিনি জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলে। এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে পাকসামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি । খুব কাছ থেকেই দেখেছেন। তারই বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ নিয়াজীর। আত্মসমর্পণের দলিল। সিদ্দিক সালিক সাবেক পূর্ব-পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম-পাকিস্তানের শােষণের অভিযােগের সত্যতা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি একজন অনুগত পাকিস্তানি ছিলেন বলে বাংলাদেশের মাটিতে পাকবাহিনীর বিপর্যয়ে এতে। তার আর্তচিৎকার ধ্বনিত হয়েছে। পুস্তকটি সচেতনমনস্ক পাঠকের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মানজিলা নামের এক অজ পাড়াগাঁয়ে ১৯৩৫ সালে সিদ্দিক সালিকের জন্ম। লেখাপড়া করেছেন লেখাপড়া ইংরেজি সাহিত্য এবং আর্ন্তজাতিক সম্পর্কে। প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও কিছুদিন পরেই সাংবাদিকতা এবং সম্প্রচার মাধ্যমে যোগ দেয় ১৯৬৪ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে ঢাকার পতনের পরে যুদ্ধ- অপরাধী হিসেবে দুই বছর ভারতে বন্দি জীবন কাটান। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে পুনরায় সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৮২ সালে তিনি স্থায়ীভাবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হক এর প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৫ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেলে তাকে ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন- এর মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৭ আগস্ট ১৯৮৮ সালে তিনি এক রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হক এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্নল্ড লুইস রাফেলের সঙ্গে একই সাথে নিহত হন। তাকে তার নিজ গ্রামে পুরোপুরি সামরিক সম্মানে দাফন করা হয়। তিনি উর্দুতে ৬টি এবং ইংরেজিতে ৩টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। 'উইটনিস টু সারেন্ডার' তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এ গ্রন্থটিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কারণ এবং তার ফলাফল যা আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন স্বাক্ষীর জবানবন্দিই বটে। বইটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-অনুসন্ধানী পাঠকদের জন্য অন্ত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি গ্রন্থ।