বাস্তবিকপক্ষে বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই ব্যবহারিক জীবনের নানাবিধ প্রশ্ন ও সমস্যার ক্ষেত্রে নৈতিক আলোচনা প্রাধান্য পায় এবং নিছক তাত্ত্বিক নৈতিক আলোচনাকে ব্যবহারিক জীবনে নিষ্প্রয়োজনীয় গণ্য করা হয়। নীতিবিদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের আলোকে আমাদের লৌকিক জীবনের নৈতিক বিতর্কগুলোর কি সমাধান সম্ভব? আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার সূত্রগুলোকে কি ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করা সম্ভব? এ জাতীয় প্রশ্নে ইতিবাচক উত্তর যে সম্ভব তা উপলব্ধ হয় ১৯৬০ সালে আমেরিকায় মানবাধিকার আন্দোলন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কাল থেকে। এই সময়েই উগ্র মার্কিন ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দর্শনের অধ্যাপকগণ সমাজ জীবনের অনেক বাস্তব ঘটনার নৈতিক বিচারে আগ্রহী হন। যেমন- সাম্য, ন্যায়, যুদ্ধ, আইন অমান্য ইত্যাদি। নীতিবিদ্যার অনেক প-িত ও লেখক, যেমন- জেমস রাচেল, পিটার সিঙ্গার প্রমূখ চিন্তাবিদ ব্যবহারিক নৈতিকতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নানাবিধ নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ক্রমশই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ঔষুধ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবং জীব বিজ্ঞানে ব্যবহারিক দিক থেকে নৈতিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রখ্যাত নীতিদার্শনিক মেরী ওয়ারনককে বৃটিশ সরকার ‘মানুষের উর্বরকরণ এবং ভ্রƒণতত্ত্ব’ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি নিযুক্ত করেন। পাশ্চাত্যের আরো কয়েকটি দেশে মানুষ ও মানবেতর প্রাণী সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নৈতিক বিচারের জন্য দার্শনিকদের নিয়োগ করা হয়। এমনকি বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা কেন্দ্রে উপদেষ্টা কমিটিতে দার্শনিকদের নিয়োগ করা হয় যাতে তাঁরা ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ কোনো রোগীর রোগমুক্তির সম্ভাবনা যেখানে নেই সেখানে রোগীর চিকিৎসাদি বন্ধ করা নৈতিক হবে কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হিউম্যান বায়ো-এথিক্স-এর ডেপুটি ডিরেক্টর এবং দর্শনের অধ্যাপক পিটার সিঙ্গার কর্তৃক Practical Ethics গ্রন্থটি ১৯৭৯ সালে প্রকাশের মাধ্যমে ব্যবহারিক নীতিবিদ্যা সাম্প্রতিককালে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।