‘উড়ো খই’ বিমল কর-এর আত্মজীবনী নয়,স্মৃতিকথা। সদর নয়, অন্দরের আলো-আঁধারি পথ দিয়ে এগিয়ে-যাওয়া ব্যাপ্ত, বিশাল, বণাঢ্য এক স্মৃতিকাহিনী। এ-কাহিনীর শুরু সেই ১৯৩১-৩২ সালে। লেখকের বয়স যখন মাত্রই নয়-দশ। সেখান থেকে দীর্ঘ প্রায় পঁচিশটি বছরের ধারাবাহিক স্মৃতিচয়ন এই গ্রন্থে। হোক আংশিক, তবু এই স্মৃতিকথার মধ্যে রয়েছে সেকালের বহু কথা, অনেক ছবি, ঘটনা ও মানুষজন, এবং সামাজিক পরিবেশের কাহিনী যা বিগত হলেও তার মূল্য হারায়নি, বরং বিগত বলেই যা আরও মূল্যবান। রয়েছে এমন-এক সৌন্দর্য ও সৌরভ, যা এখনও মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে।বিহারপ্রবাসী এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ একটি ছেলে কী দেখেছিল তার বাল্যে-কৈশোরে, কী অনুভব করত সে, আর ক্রমশ বড় হয়ে উঠতে-উঠতে, নানা ঘাট ছুঁয়ে যেতে-যেতে কী দেখেছিল এই জীবনের—তার অন্তরঙ্গ বিবরণ ধরা আছে এই গ্রন্থে। ধরা আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী, রাজনৈতিক আলোড়ন, আগস্ট আন্দোলন, মন্বন্তর আর দাঙ্গার দুঃসহ স্মৃতি, দেশভাগ। ধরা আছে অজস্র সুখ-দুঃখ, হতাশা আর আশ্বাস-খোঁজায় সমুজ্জ্বল কিছু মুহূর্তও। ‘উড়ো খই’ বস্তুত এক পটচিত্র। লেখক হিসেবে বিমল কর-এর খ্যাতি-প্রতিষ্ঠা অর্জনের অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে এই স্মৃতিকথা, তবু লেখক বিমল কর-এর প্রস্তুতিপর্বের বহু অভিজ্ঞতা ও উপাদান এখানে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে যা মনস্ক ও কৌতূহলী পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না। সেদিক থেকেও এ-গ্রন্থের মূল্য অপরিসীম।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।