"রিয়াদুস সালেহীন" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ ‘রিয়াদুস সালেহীন’ নামক এই সুবৃহৎ নির্বাচিত হাদীস সংকলন গ্রন্থটি। রচয়িতা কর্তৃক প্রদত্ত এই গ্রন্থের পুরাে নামটি হচ্ছে- ‘রিয়াদুস সালেহীন মিন কালামে সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র বাণী সম্ভার দ্বারা সুশােভিত পূণ্যবানদের উদ্যান। আর প্রকৃত অর্থেই নামের স্বার্থকতা এই অনন্য গ্রন্থটির ক্ষেত্রে যথার্থ। কেননা, বিগত দেড় হাজার বছরে যত হাদীস সংকলন গ্রন্থ রচিত হয়েছে তন্মধ্যে এই পরিসরে এতাে অধিক বিষয় সম্বলিত হাদীস গ্রন্থ অন্য কেউ রচনা করতে পারেননি, যা ‘রিয়াদুস সালেহীন’ নামক এই নির্বাচিত হাদীস সংকলন গ্রন্থটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এই অসাধারন বৈশিষ্ট্যের জন্যই রিয়াদুস সালেহীনের প্রয়ােজনীয়তা ও গ্রহণযােগ্যতা কালের সীমানা অতিক্রম করে রচনাকাল ৬৭০ হিজরী থেকে ১৪৩৮ হিজরী অর্থাৎ, অদ্যাবধি সমান জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযােগ্যতার সাথে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সমাদৃত হয়ে আসছে। পৃথিবীর এমন কোন জীবন্ত ভাষা নেই যে ভাষায় রিয়াদুস সালেহীনের একাধিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়নি। গ্রন্থটির এই বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযােগ্যতার মূল কারণ হচ্ছে- যুগ চাহিদার আলােকে পবিত্র হাদীস শরীফের বৈচিত্রময় পরিচ্ছেদ তথা বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে দক্ষতা। মানুষের দৈনন্দিন দ্বীনি যিন্দেগীর প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্বারােপ এবং ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গরূপকে অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও হৃদয়গ্রাহী উপায়ে উপস্থাপন। সেই সাথে ইমাম নববী (রাহ.) তাঁর এই গ্রন্থের প্রত্যেক পরিচ্ছেদের শুরুতে বিষয় সংশ্লিষ্ট পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ সংযােজন করে রিয়াদুস সালেহীনকে প্রয়ােজনীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে এমন এক অপরিহার্যতার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যার বিকল্প নেই বললেই চলে। কালজয়ী হাদীস সংকলন গ্রন্থসমূহ বা ‘সিহাহ্ সিত্তা’ নামে বিগত হাজার বছরব্যাপী সর্ব মহলে স্বীকৃত ও গ্রহণযােগ্য ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ যথা : ১- সহীহ আল বুখারী, ২- সহীহ মুসলিম, ৩- সুনানে তিরমিযী, ৪সুনানে আবু দাউদ, ৫- সুনানে নাসায়ী ও ৬- সুনানে ইবনে মাজাহ্, এই সুবিখ্যাত ছয়টি হাদীস সংকলন গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায় থেকে সংকলক ইমাম নববী (রাহ.) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যথােপযুক্ত হাদীস নির্বাচন করে বিশটি কিতাব তথা অধ্যায়ের অন্তর্গত তিন'শ পচাত্তরটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে বিভক্ত করে তা 'রিয়াদুস সালেহীন’ নামক এই গ্রন্থে সুবিন্যস্ত করেছেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়ার সুবাদে শৈশব থেকেই ধর্মশিক্ষার ভিত শক্ত হয় তার। মায়ের মৃত্যুর পর মাতামহের কাছে চলে গেলেও বেশি দিন সেখানে থাকেননি। পুনরায় পৈত্রিক ভিটায় ফিরে এসে ভর্তি হন পাঁচবাগ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়। এখান থেকেই আলিম এবং ফাজিল পাস করে ঢাকা সরকারি মাদ্রাসায় চলে আসেন। এরপর হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে দুটি কামিল ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এ অঞ্চলের আলিয়া এবং কওমি ধারার মধ্যে বিরাজমান মতপার্থক্য এবং রেষারেষি কখনোই ছুঁতে পারেনি তাকে। তিনি আলিয়া ধারায় পড়েও কওমি ধারার প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। ছাত্রজীবনেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খান লেখালেখি ও সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ‘মাসিক দিশারী’ এবং ‘সাপ্তাহিক নয়া জামানা’য় কাজ করবার পর ১৯৬১ সালে তিনি ‘মাসিক মদীনা’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ দায়িত্বে তিনি আমৃত্যু বহাল ছিলেন। সাংবাদিকতার বাইরেও তিনি বিভিন্ন সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এর বই সমূহ দেশের বাইরেও সমান জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা সহ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এর বই সমগ্র ব্যাপক জনপ্রিয়। ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন’, ‘স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ (সা.)’, ‘জীবনের খেলা ঘরে’, ‘জীবন সায়াহ্নে মানবতার রূপ’, ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’, ‘রিয়াদুস সালেহীন’, ‘সীরাতুন নবী’, ‘খাযায়েনুল ইরফান’, সহ অসংখ্য পাঠকপ্রিয় বই লিখেছেন তিনি।