"উপন্যাস সমগ্র ৭" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: উপন্যাস সমগ্রের এই খণ্ডে লেখকের সূচনাপর্বের রচনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের লেখা স্থানপেয়েছে। নির্বাচিত নটি উপন্যাসেই উঠে এসেছে। সম্পর্কের সূক্ষ্ম টানাপােড়েন। এই নির্জন ব্যক্তিত্বটি পরমযত্নে মমতায় ধীরে ধীরে উন্মােচন করেন। সম্পর্কের বিবিধ অবয়ব। বি. এন রেলের কোনও এক ব্রাঞ্চ লাইনের একেবারে শেষ স্টেশন বারবুয়া। জায়গাটার চারপাশে অরণ্যের আভাস। সেই পটভূমিতে লেখকের প্রথম সাহিত্য উপন্যাস ‘বনভূমি’। মানুষ শুধু পরভূমেই পরবাসী হয় না। ‘পরবাস’ উপন্যাসের পরিমল একসময় অনুভব করে, সে নিজের অজান্তেই দখল করেছে দীনেশের ফেলে যাওয়া স্থানটি। নিজের অগােচরেই সে কি প্রবেশ করছে অন্য সত্তার অভ্যন্তরে ? ‘নির্ভর’-এর বিষ্ণু-প্রমীলার সম্পর্কটিও প্রায় একইভাবে ভাঙনের মুখে এসে, তাদের দাড় করিয়ে দেয় এক অনিবার্য প্রশ্নের মুখােমুখি। বিষ্ণু কার ওপর নির্ভর করবে ? সুশীতল ও কমলার জীবনের ভাঙাগড়ার কাহিনী। ‘অতঃপর’ ‘বেদনাপর্বের শচীনমামা মৃত এবং প্রায় অজানা, অচেনা হয়েও আগাগােড়া প্রচ্ছন্নে উপস্থিত থেকে গেছেন। তার একাকিত্ব, বেদনা, বিচিত্রভাবে জীবনের সমাপ্তি, বসুধাকে এনে দিয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যের মুখােমুখি। তখনই আমরা অনুভব করি আমাদের গভীর গােপন অসুখটি। আমাদের চারপাশেই তাে পঙ্গুত্ব—শারীরিক ও মানসিক। তথাপি’ একটু ক্ষমা, সহানুভূতি হয়তাে সম্পর্কগুলিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। ‘অজ্ঞাতবাস’ এক বিচিত্র আত্মসংকটের কাহিনী। মানুষের আত্মপরিচয়ের এক গৃঢ় সংকটকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাস অনিবার্যভাবেই পৌঁছে গেছে আরও অনেক জায়গায়। ‘মৃত ও জীবিত’র আবীরও একসময় অনুভব করে। চেহারার সাদৃশ্য ক্রমশ তাকে পরমার কাছে এক বিকল্প ব্যক্তিত্ব তৈরি করছে। তার মুখ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। অপরের মুখােশের আড়ালে। উভয়পক্ষ এক স্বাদহীন, বিবর্ণ দাম্পত্য জীবনের জটিল কথা, যার থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল নিত্যপ্রিয়রা। তবু পারল কেন? কোন গােপন দুর্বলতা আগলে রাখল এই আপাত রক্তহীন দাম্পত্য জীবনটিকে? স্বতন্ত্র গােত্রের লেখক বিমল কর দীর্ঘদিন ধরেই তৈরি করেছেন তার নিজস্ব জায়গাটি, যেখানে তিনি অনন্য, এই খণ্ডে সংগৃহীত উপন্যাসগুলিতে তার সেই নিভৃত পরিমণ্ডলটির মায়াময় স্বাদ পাঠক পাবেন।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।