এই নিয়ে বইটির তৃতীয় সংস্করণ বের হলো। বরীন্দ্রোত্তর বাঙলা কবিতার আধুনিকায়নে নির্মাণকলার ক্ষেত্রে কী বিবর্তন ঘটেছে তা প্রথমবারের মতো বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছেন কেবল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও কবিতার বিষয়বস্তুনির্ভর সূচক: বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের নৈরাশ্য, বিনষ্টি, মূল্যবোধের অবক্ষয়, অমঙ্গলবোধ, ইত্যাদির ভিত্তিতে। এ-কারণেই ১৯৯৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে এটি এক যুগান্তকারী বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাহিত্যিক শওকত ওসমান লিখেছেন; “সাম্প্রতিক একটি আকষ্মিকতা আমাকে বুঁদ করে রেখেছিলো... দেশে মননের অনুশীলন তো নেই বললেই চলে...সেখানে বুদ্ধিদীপ্ত এমন একটি গ্রন্থের আবির্ভাব (হ্যাঁ আবির্ভাবই বলবো!) সত্যিই অভাবনীয় বৈ কি!....বিশ্বাসে মিলাই হরি’র দেশ থেকে [লেখক] অনেকদূর অগ্রসর (জনকণ্ঠ, ৪ এপ্রিল ১৯৯৭)। লেখাগুলো কেবল পত্রিকায় পড়েই কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন: “আবিদ আনোয়ারের সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ আমার ভালো লাগে [কারণ] কোনো ফাঁকি নেই, ভান নেই; স্পষ্ট তার উচ্চারণ অথচ ধৃষ্ট নয়” (ভোরের কাগজ, ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৩)। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত সাক্ষাতকারে হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন “আবিদ বেশ চমৎকারভাবে আমাদের কবিতার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেনন” (সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ২১ মার্চ ১৯৯৭)। ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি ও গান রচয়িতা মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান লিখেছেন ‘বাঙলা কবিতার আধুনিকায়ন’ বইটি যারা পড়েননি, তারা বাঙলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত আছেন” (ওয়েব পোর্টাল)। বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. তপন বাগচী লিখেছেন: “সকল সীমাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাওয়া যায় আবিদ আনোয়ারের আলোচনায় ঢুকে পড়লে....কবিতার আধুনিকায়ন নিয়ে এত বিশদ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা তাঁর চেয়ে অন্য কেউ আর করেননি এদেশে” (কালি ও কলম, চতুর্থ বর্ষ : অষ্টম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪১৪)। বাঙলা কবিতার আধুনিকায়নের পটভূমি হিসেবে বিশ্বকবিতার আধুনিকায়ন-সংক্রান্ত তথ্যও বইটিতে আলোচিত হয়েছে; এতে সাহিত্যের ছাত্র-শিক্ষক ও নবীন কবিদেরও প্রয়োজন মিটবে
আবিদ আনােয়ার-এর জন্ম ১৯৫০ সালের ২৪ জুন কিশােরগঞ্জ জেলায় কটিয়াদী থানার চর আলগী গ্রামে। বাবা মােঃ আজিমউদ্দিন ও মা হাসিনা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ ১৯৭২ সালে এমএসসি এবং পরে ১৯৮৭ সালে কেবল লেখালেখির সূত্রেই বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ড মার্কসহ সাংবাদিকতায় এমএ পাশ করেন। সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের National Journalism Scholarship Society-1 সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। কবিতা, ছড়া, গল্প ও গান রচনায় এবং সাহিত্য সমালােচনায় তিনি সমান পারদর্শী । প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চৌদ্দ ।। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদক, সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৯৬ সালে রাইটার্স-এর স্মারক পদক ও সংবর্ধনা, ১৯৯৭ সালে । বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সংবর্ধনা ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি পুরস্কার সৈয়দ নজরুল ইসলাম পদক এবং ২০০৬ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চাকুলিয়া ক্যাম্প থেকে কমান্ডাে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে কিশােরগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করেন। ধূলদিয়া রেলসেতু অপারেশনে কৃতিত্বের জন্য । স্বাধীনতার পর কিশােরগঞ্জ মহকুমা মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পের প্রথমে সহ-অধিনায়ক ও পরে অধিনায়কের দাযিত্ব পান। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-র প্রকাশনা বিভাগে কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে।