পালঙ্কের ঠিক মাঝখানে বসেছিল দীপা। ভাঁজ করা দু'হাঁটুর মাঝখানে মুখটা নত, যেভাবে বাসররাতের প্রথম প্রতীক্ষাটা পার করে নতুন বউ। দীপার রেশমি সুন্দর চুলগুলো ছড়িয়ে থাকে পিঠের এক পাশজুড়ে। তার মুখটা দেখা যায় না, কিন্তু তার ফরসা গ্রীবার বঙ্কিম সৌন্দর্যটি উপভোগ্য হয়ে ওঠে দারার চোখে। দারা রোমাঞ্চিত হয়, মনটা লোভী হয়ে ওঠে। এখন সময়টাও ভারি আবেগঘন, বাইরে বৃষ্টির উপমাহীন মূর্ছনা, সুরের আবেশে মন্ত্রজগৎ। অফিস থেকে তখনই ফিরল দারা। জুতোর তলায় কাদা লেগে যাওয়ায় বারান্দায় জুতো জোড়া খুলে রাখে। দরজা খোলাই ছিল। ড্রয়িং রুম, তারপর ডাইনিংয়ের প্যাসেজটা পার হয়ে দীপার বেডরুমের সামনে এসে দাঁড়াল দারা। এইটুকু পথ সে নিঃশব্দেই পার হয়ে এসেছে, নিঃশব্দতা ইচ্ছে করে নয়, পায়ে জুতো না থাকায় অথবা বৃষ্টির শব্দের আড়ালে যেটুকুবা পায়ের শব্দ উঠছিল, সেটা চাপা পড়ে যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কয়েক পলক দীপার এই অদ্ভুত নিমগ্নতার ছবি দেখে দারা। দীপার মগ্নধ্যান ভাঙাতে ইচ্ছে করল না। নিজের রোমান্টিক মনটাকে আবারও সে কৌটোবন্দি করে। লোভী মনটা শান্ত সুবোধ হয়ে কৌটোর ভেতর বন্দি হয়, যেভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে বেদেনির ঝাঁপিতে বন্দি হয়ে থাকে রোমাঞ্চিত নাগ।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের সম্রান্ত পরিবার ভূঁইয়া বাড়িতে জন্ম। শৈশব-কৈশাের কেটেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে । শিক্ষাজীবন কেটেছে ফেঞ্চুগঞ্জ এনজিএফএফ স্কুল, সিলেট সরকারি এমসি কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিলেট ও চট্টগ্রাম রেডিওতে সংবাদপাঠ ও উপস্থাপনা করেছেন আট বছর। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বইপত্র উপস্থাপনা করেছেন এক যুগ। কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক গণকণ্ঠে সহসম্পাদক হিসেবে। তারপর সরকারি চাকরি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে। সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু সচল হয়ে উঠেছেন নেশার জগৎ লেখালেখি নিয়ে। উপন্যাস, ছােটগল্প, শিশুতােষ ও কিশাের রচনা- সব মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩০। প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসসমগ্র ২০১৫, গল্পসমগ্র ২০১৭ | ২০১৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হলাে বাংলাসাহিত্যে এযাবৎ প্রকাশিত বৃহৎ কলেবরের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এবং মহান চীনের গৌরবােজ্জ্বল অতীত এবং চীনা জনগণের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা ভ্রমণ উপন্যাস ‘মহাচীনের মহাজাগরণ’ । সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন কিউট সাহিত্য পুরস্কার, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, পালক অ্যাওয়ার্ড, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ (বাসপ) পদক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষায় অনগ্রসর মানুষকে শিক্ষার আলােয় আলােকিত করতে সুবর্ণচরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জুবিলি হাবিবউল্যা মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপুল গ্রন্থসমৃদ্ধ লাইব্রেরি বজলের রহমান ভূঁইয়া স্মৃতি পাঠাগার'। ভ্রমণের নেশা আছে। বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, পাহাড়, সমুদ্র তার প্রিয়। ভ্রমণ করেছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। পিতা-নুরুল আলম ভূঁইয়া, মা-আনােয়ারা বেগম, স্ত্রীজোহরা সুলতানা। দুই পুত্র : শাহরিয়ার রাইসুল ইসলাম, শাহমান রাউফুল ইসলাম । স্বপ্ন : উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ।