“জীবনের যুদ্ধ যুদ্ধের জীবন" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় ১৯৭১ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আর বীর বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি বা অর্জন। আমাদের এই প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে একদিকে যেমন রয়েছে বর্বর দখলদার পাক-বাহিনীর হাজারাে মর্মান্তিক হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন বা জনপদ ধ্বংস করে দেবার ঘটনা তেমনি রয়েছে মুক্তিযােদ্ধাদের। হাজারাে বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ঘটনা। সব মিলিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধটি যেন। এক মহাকাব্য। কিছু সংখ্যক চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরােধী রাজাকার, আল বদর। বা আল শামসের সদস্য ব্যতীত পুরাে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিই কোনাে না | কোনােভাবে এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। আর তাই অজস্র মানবিক ঘটনা। মালায় গাঁথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত আখ্যানভাগ। কোনাে একক ব্যক্তি বা একমুখী ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে এর পুরাে ব্যপ্তি বােঝা কোনােভাবেই সম্ভব নয়। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হবে দীর্ঘ কাল ধরে, বলতে হবে। হাজারাে কণ্ঠে এবং অজস্রধারায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কাহিনিমালায় এক উল্লেখযােগ্য সংযােজন লে. কর্নেল এস আই এম নুরুন্নবী খান বীর বিক্রম (অব) কর্তৃক রচিত জীবনের যুদ্ধ : যুদ্ধের জীবন’ গ্রন্থটি। জীবনের প্রবল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুঝে চলতে গিয়ে নূরুন্নবী খান ক্রমে বুঝতে পেরেছিলেন তার ব্যক্তিজীবন বাংলার সমাজ জীবনের সঙ্গে। ওৎপ্রােতভাবে বাঁধা পড়ে আছে অদৃশ্য এক রশ্মির বন্ধনে। আর তাই তিনি। নিজেকে ১৯৬২-এর হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপাের্ট বাতিলের ছাত্র। আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-৬৯-এর ছাত্রদের ১১। দফা আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে নিজেকে সম্পৃক্ত। রেখেছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দিয়েছিলেন নিজের একরােখা, স্বাধীনচেতা জীবনােপলব্ধির সম্মান রক্ষা করতে এবং একাত্তরের যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপন কর্তব্য বেছে নিতে তার বিলম্ব ঘটেনি এক। মুহুর্তের জন্যও। শুরুর দিনগুলাে থেকেই তিনি আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামে শরিক হয়েছিলেন। বৃহত্তর যশাের, দিনাজপুর, রংপুর (রৌমারী মুক্তাঞ্চল), ময়মনসিংহ (জামালপুর এলাকা) এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অসম । সাহসিকতাপূর্ণ বিভিন্ন অপারেশনে তার সক্রিয় ও নেতৃভূমিকা সুলভ । অভিজ্ঞতার বিবরণ এই গ্রন্থকে যুগিয়েছে এক ভিন্নতর মাত্রা।