"আল কুরআন (সহজ বাংলা অনুবাদ) (শুধু বাংলা)" বইটির অনুবাদকের আরয থেকে নেয়াঃ কুরআন মজিদের বেশ কিছু অনুবাদ বাংলা ভাষায় রয়েছে। তবে আমরা আশা করি আমাদের এই অনুবাদটি বাংলা ভাষায় কুরআনের অনুবাদের ক্ষেত্রে একটি নতুন ধরনের সংযােজন। এই অনুবাদটির কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলাে : ০১. এই অনুবাদটি করা হয়েছে যারা কুরআন বুঝতে চান বিশেষভাবে তাদের জন্যে, তাদের প্রয়ােজনকে সামনে রেখে। ০২. জানার জন্যে কুরআন পড়ন, মানার জন্যে কুরআন পড়ন' এই শ্লোগানটিকে সামনে রেখেই করা হয়েছে এই অনুবাদ। ০৩. অনুবাদে অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ তফসির গ্রন্থসমূহের অনুসরণ করা হয়েছে। ০৪. অনুবাদে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল (lucid) বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ০৫. অনুবাদে আধুনিক বাংলা বানানরীতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভাষা সাবলীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। ০৬. কুরআনের যেসব শব্দ ও পরিভাষা বাংলা ভাষায় চালু আছে, সেগুলাের অনুবাদ না করে সেগুলাে হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন : ঈমান, অহি, সালাত, যাকাত, যিকির, দোয়া, আমল, এলেম, ইবাদত, ইত্তেবা, কওম, উম্মত ইত্যাদি। ০৭. তবে, বাংলা ভাষায় চালু থাকা যেসব আরবি শব্দ কম প্রচলিত, ব্রেকেটে সেগুলাের অর্থ লিখে দেয়া হয়েছে। ০৮. একান্ত জরুরি মনে করায় কোথাও কোথাও দুয়েকটি টীকা দেয়া হয়েছে। ০৯. প্রতিটি সূরার শুরুতে সেই সূরার আয়াত ভিত্তিক আলােচ্য বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে সূরাটি পড়তে শুরু করার আগেই পাঠক জেনে নিতে পারবেন সূরাটিতে কী কী বিষয়ে আলােচনা হয়েছে এবং কোন্ আয়াত থেকে কোন্ আয়াত পর্যন্ত কী বিষয়ে আলােচনা হয়েছে? ১০. বাংলা ভাষায় প্রচলিত কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষাগুলাের অর্থ ও মর্মার্থ উল্লেখ করে একটি পরিভাষা কোষ দেয়া হয়েছে। আশা করি কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে এটা পাঠকদের জন্যে দারুণ সুবিধাজনক হবে। ১১. কুরআনের একটি সংক্ষিপ্ত বিষয় নির্দেশিকাও দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাছাই করে নিয়ে সেগুলাে কুরআনের কোন্ কোন্ সূরার কোন্ কোন্ আয়াতে আলােচিত হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে। ১২. এক বচনে আমরা ব্যবহার: মহান আল্লাহ কুরআন মজিদে কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্যে নিজের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বহুবচন সর্বনাম অর্থাৎ আমরা’ ও ‘আমাদের ব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, আল্লাহ তাে এক। তিনি কেন নিজের জন্যে বহুবচন ব্যবহার করেন? এর জবাব হলাে, আল্লাহ শুধু একই নন, বরং সেই সাথে তিনি মহাবিশ্বের মালিক, সম্রাট এবং মহামর্যাদাবানও। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই রাজা, সম্রাট এবং মর্যাদাবান ব্যক্তির জন্যে সম্মানার্থে বহুবচন ব্যবহার করা হয়। এটাকে বলা হয় ‘রাজকীয় বহুবচন' (Royal Plural)। সে হিসেবে মহাবিশ্বের মালিক ও সম্রাট মহামর্যাদাবান আল্লাহর জন্যে এই সম্মানসূচক ও মর্যাদাব্যঞ্জক বহুবচন সবার আগেই প্রযােজ্য। এই বহুবচনটি বহুত্বব্যঞ্জক নয়, মর্যাদাব্যঞ্জক। এটা বহুত্বব্যঞ্জক হলে সবার আগে আরবের মুশরিকরাই তাওহীদের বিরুদ্ধে নিজেদের শিরকের পক্ষে এটাকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতাে। আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকের এই অনুবাদটি কবুল করুন এবং এর মাধ্যমে সমাজকে তাঁর কিতাবের আলােতে উদ্ভাসিত করুন। এর উসিলায় এই অনুবাদকের ভুলত্রুটি ও গুনাহ্ খাতা মাফ করে দিন এবং এটিকে তার আখিরাতের মুক্তির উপায় বানিয়ে দিন। আমিন ।