রবীন্দ্রনাটকে গানের সুর বিশুদ্ধ সংগীতের বিচার যেমন হয় সুরের বিন্যাস দিয়ে, কিংবা কথা-সুরের সংগতির প্রশ্নটি যেমন বড়ো হয়ে ওঠে গানের মূল্যায়ন-প্রসঙ্গে, নাটকের গানের বিচার ঠিক সেভাবে করা যায় না কখনোই। শুধু কথার গৌরব, বা নিছক সুরমাধুর্য একেবারেই বড়ো নয় নাটকের গানে, এমন-কি কথা-সুরের সামঞ্জস্যের সৌন্দর্যও নাট্য-বিচ্ছিন্নভাবে জরুরি নয় তেমন ; নাটকে গান মূল্য পায় নাটকীয় তাৎপর্যে, নাট্যবিষয়ের সঙ্গে একাত্মতায়। তাই নাটকে গানের নিজস্ব সৌন্দর্য সন্ধানের পরিবর্তে আমরা মনোযোগী হয়ে উঠি নাটকীয় মুহূর্ত আর গায়কচরিত্রের সঙ্গে গানটিকে মিলিয়ে নিতে, আর তারই সঙ্গে দেখে নিতে চাই কথা ও সুরে গানের সম্পূর্ণ হয়ে ওঠাকে। লক্ষ করতে ভালো লাগে যে, রবীন্দ্রনাথের নাটকের অধিকাংশ গানই কথা-সুরে-তালে সুসম্পূর্ণ, অর্থাৎ এগুলি ‘গান’, এবং নাটকের গান। সেই কারণে একই গান ভিন্ন তাৎপর্য পেয়ে যায় নাটকে আর নাটক-বিযুক্ত স্বতন্ত্র গান হিশেবে। গীতবিতান-এ শীতঋতুর গান ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে' বা “প্রেম”-পর্যায়ের গান ‘তোমায় গান শোনাব' রক্তকরবী নাটকে পায় নতুন মাত্রা, অন্যতর ভাবব্যঞ্জনা।