সামাজিক যে-তথ্য সঞ্চয়ের প্রয়োজন তাও আজ পর্যন্ত অসমাপ্ত। সে-বিষয়ে অভাববোধও বেশিদিনের কথা নয়। অথচ সেই পশ্চাদপটের অভাবে বাঙলার কাব্যে বাঙালির মানসের বিকাশ পুরোপুরিভাবে বোঝা যায় না, কারণ ব্যক্তির মধ্যে সমাজমনের প্রকাশেই কাব্যের জন্ম। পশ্চাদপটের সেই অভাব পরিপূরণের চেষ্টায়ই বর্তমান ক্ষুদ্র গ্রন্থখানির উদ্ভব। অনেক বিষয়ে প্রচলিত মত আলোচনার ফলে আমার কাছে অপ্রামাণ্য মনে হয়েছে। তার অর্থ এ নয় যে পুরাতন মত একেবারে ভুল। সাহিত্য দর্শন প্রভৃতি সংস্কৃতির অনুশীলনে খাঁটি সত্য বা নিছক ভুলের পরিচয় বড় একটা মেলে না। তাই প্রচলিত মতের সঙ্গে পার্থক্য নির্দেশের জন্য নতুন বক্তব্যের প্রতি অনেক সময় অতিরিক্ত ঝোঁক দেওয়া হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা চলে যে শঙ্কর বেদান্তের উপর ইসলামের প্রভাবকে স্বীকার করে নিয়ে তার মধ্যে সে-যুগের কাব্যবিকাশের অন্যতম কারণ খুঁজেছি। প্রায় চার-পাঁচ বছর পূর্বে একটি প্রবন্ধে বাঙলার কাব্যধারার রূপনির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলাম। তার ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও তা অনেক সাহিত্যরসিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সে-সম্বন্ধে বিস্তৃততর আলোচনা করার কথা অনেকদিন ভেবেছি কিন্তু নানা কারণে সে-পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী করতে পারিনি। তার ফলে বর্তমান গ্রন্থের বহুস্থানে ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে, কোনও কোনও স্থলে একদেশদর্শিতার পরিচয়ও হয়তো মিলতে পারে। এ সমস্ত দোষত্রুটি সম্বন্ধে চেতনা সত্ত্বেও গ্রন্থপ্রকাশের প্রধান কারণ এই যে, সামাজিক মানসের প্রকাশ হিসেবে বাঙলা কাব্যের ইতিহাস আলোচনার চেষ্টা পর্বে কোনওদিন হয়েছে বলে জানি না।