‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’ পুরাকীর্তির বিবরণ নয়। বিভিন্ন জেলার নানারকম লৌকিক উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান, প্রথা-সংস্কার, দেবদেবী দেবালয় শিল্পকলা জনগােষ্ঠী প্রভৃতির বিবরণ, যার সমগ্র রূপকে ‘বঙ্গজনসংস্কৃতি’বলা যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রিপাের্টে (পূর্বাঞ্চলের) পুরাকীর্তির তালিকাবদ্ধ বিবরণ আছে। এ সমস্ত বিবরণের সঙ্গে ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’র একটা মৌল পার্থক্য আছে। এই গ্রন্থে প্রত্যেকটি সাংস্কৃতিক বিষয়ের যথাসম্ভব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তাৎপর্য ও পশ্চাদভূমি উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে, কেবল প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা বা রিপাের্ট দিয়েই কোনাে বিষয়-পরিচয় শেষ করা হয়নি। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেরও একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি আছে, সেটা যতদুর সম্ভব সমাজবিজ্ঞান-সম্মত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার গ্রামে গ্রামে লেখক যা দেখেছেন, তা কখনও তার কাছে রাজারাজড়াদের বা জমিদারদের কীর্তির চিহ্ন বলে মনে হয়নি বরং বাংলাদেশের অসাধারণ লােক-প্রতিভাজাত লােককীর্তি বলে মনে হয়েছে। বিশাল রাজপ্রাসাদ, বিরাট মন্দির, পাথরের অপূর্ব দেবমর্তি, কাঠের আসবাবপত্র, চণ্ডীমণ্ডপ, লােহাপিতলকাঁসার নানারকম জিনিসপত্র এগুলি তাে রাজারা করেননি, তাদের প্রজারা করেছেন, অর্থাৎ বাংলার স্থপতি সূত্রধর ভাস্কর চিত্রশিল্পী মৃৎশিল্পী কর্মকার তন্ত্তবায় প্রভৃতি লােকসাধারণ করেছেন।