ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে যাঁদের প্রতিভা ও প্রভাবে বাংলা নাট্যমঞ্চের বিপুল প্রসিদ্ধি ও শিল্পসমৃদ্ধি ঘটে-তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হচ্ছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)। সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আবির্ভাব ও জনপ্রিয়তা কবিতা ও গানের মধ্যদিয়ে হলেও নাট্যকার হিসেবেও তিনি খুব দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন। রবীন্দ্রযুগে বাস করেও তিনি সাহিত্য ও গানে স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব বজায় রাখার মতো দুঃসাধ্য কাজটিতে সফল হয়েছিলেন।- রবীন্দ্রনাথ এই কবির মধ্যে দেখেছিলেন "আত্মবিশ্বাসের একটি অবাধ সাহস।" তাঁর 'মন্দ্র' কাব্যগ্রন্থকে তিনি অভিনন্দিত করেছিলেন 'অবলীলাকৃত' ও 'নতুনতায় ঝলমল' কাব্যপ্রতিভার জন্য। অবশ্য তাঁর জনপ্রিয় ঐতিহাসিক নাটক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ নীরব ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর অসাধারণ 'বাণী ও সুরের' সমন্বয়ে রচিত দেশপ্রেমমূলক গানগুলোর মধ্যদিয়ে বাঙালি জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি', 'বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ'-এসব গান আমাদের জীবনে অফুরন্ত দেশপ্রেম ও প্রেরণার উৎস। এছাড়া ডি. এল. রায়ের হাসির ছড়া ও গানগুলো এক ভিন্নমাত্রিক সমাজসচেতনতা এবং নির্মল আনন্দের উৎস। বাংলা নাটকের ২০০ বছরের গৌরবময় ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলাল একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। উনিশ শতকের শেষপর্যায়ে তিনি প্রহসন থেকে শুরু করে গীতিনাট্য, সামাজিক, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক-তখনকার নাট্যাঙ্গনে বিদ্যমান প্রায় সব কটি ধারা অবলম্বন করে নাটক লেখা শুরু করেন।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) কবি, নাট্যকার, গীতিকার। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম। পিতা সুকণ্ঠ গায়ক কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগরের দেওয়ান এবং মাতা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন অদ্বৈত প্রভুর বংশধর। তাঁর দুই অগ্রজ রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল এবং এক ভ্রাতৃজায়াও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।