"দেশে বিদেশে" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানীর বক্ষ্যমাণ সফরনামা ভ্রমণ-সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। তিনি বিপুল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পড়াশোনার অধিকারী একজন দূরদর্শী আলেম। জামিয়া রাহমানিয়া ও দারুল উলূম দেওবন্দের গৌরব; বিহার ও দক্ষিণাত্যের অহংকার। তিনি একাধারে নতুন প্রজন্মের বিশিষ্ট আলেম, বিজ্ঞ মুফতী, লেখক, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। আবার উদ্যমী ও কর্মবীর। অনেক প্রতিষ্ঠানের জিম্মাদার সঙ্গে অত্যন্ত বিনয়ী ও বন্ধুবৎসল। তিনি বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং ভাষণদানের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশে সফর করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণশক্তি অত্যন্ত তীক্ষè, বুদ্ধি-বিচক্ষণতা অতি সূক্ষ্ম আবার কলমও শক্তিশালী ও সাবলীল। তাই তাঁর সফরনামা হয়েছে অত্যন্ত সারগর্ভ তথ্যবহুল ও সুখপাঠ্য। বক্ষ্যমাণ সফরনামা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে। এখন তা বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। সফরনামা শুরু হয়েছে হজের বিবরণের মাধ্যমে। এটাই একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সময় হলো—যে দিনগুলো সে হারামাইনে কাটায়। সেখানকার প্রতিটি অণু-পরমাণুকে তাঁর মনে হয় চন্দ্র-সূর্য। একজন খাঁটি মুমিনের প্রেরণা থেকে সফর নামাটি লেখা হয়েছে। সত্যিই তা পড়ার মতো। সফরনামাটি অত্যন্ত তথ্যবহুল। কলম এখানে তার চূড়ান্ত কারিশমা প্রদর্শন করেছে। কোনো কোনো জায়গা তো ভাষা ও সাহিত্যের চমৎকার নিদর্শন। এতে মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতির প্রতি সবিশেষ আহ্বান জানানো হয়েছে। লেখকের কলম ও কদম সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, বরং এর প্রতি চরম বিতৃষ্ণ। ইরান ও কাতারের সফরনামায় সেই প্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বইটি সঙ্গত কারণেই শ্রেষ্ঠ সফরনামাগুলোর মাঝে গণ্য হবে। সাবলীল ভাষা ও ব্যাকুল হৃদয়ে তিনি মুসলিম মিল্লাতের অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।
বিদগ্ধ ফকিহ, বহু গ্রন্থের লেখক এবং ইসলামি জ্ঞানের নানা শাখায় তাঁর গর্বিত বিচরণ। অল ইন্ডিয়া ইসলামি ল বোর্ড এবং ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি ইন্ডিয়ার জেনারেল সেক্রেটারি। তার পারিবারিক নাম নুর খোরশেদ। খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী তার পরিচিত নাম। তিনি বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলায় ১৯৫৬ সনে জন্মগ্রহণ করেন। ফিকহি প্রজ্ঞার গভীরতা, ইসলামি চেতনার স্বাক্ষরতা, ফিকহের অভিধানতত্ত্বের বিজ্ঞতা এবং নতুন নতুন জিজ্ঞাসার ফিকহি সমাধান তার অনন্ত জ্ঞানের উজ্জ্বল উপমা৷ ফিকহি আলোচনা ও মতামতে তঁর অভিমত নিরঙ্কুশ ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি মোঙ্গেরের জামেয়া রহমানিয়া থেকে স্নাতক করেন৷ পরে দারুল উলুম দেওবন্দে আবারো স্নাতক করেন৷ পাটনার ইমারতে শরইয়াহ থেকে ইফতা ও বিচারিক প্রশিক্ষণ নেন৷ দারুল উলুম সাবিলুস সালামে তিনি দীর্ঘ বাইশ বছর শিক্ষকতা করেন। তার রচিত গ্রন্থ ও প্রবন্ধের সংখ্যা অনেক। সবগুলো এখনো মুদ্রিত হয়নি। তবে বাংলায় অনূদিত হয়েছে কয়েকটি মাত্র। যেমন মানবতার নবী, হালাল-হারাম।