"পায়ের তলায় সর্ষে-১ম-২য় খণ্ড" বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথাঃ ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ নামটি একমাত্র তার ক্ষেত্রেই সর্ব অর্থে মানায়। শুরু করেছিলেন সেই যৌবনবয়েসে। এখনও এই পঁচাত্তর পেরিয়েও কোথাও যেতে হলেই তিনি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি। তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে বরেণ্য কবি, বিশিষ্ট কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক, আবার ভ্রমণপিপাসু অদম্য পথিক। কিন্তু এ ভ্রমণ কি নিছকই শুধু নতুন দেশ নতুন নিসর্গ দেখার টান? ভুল হল তার লেখাগুলি কখনও মানুষের মর্মস্পর্শী গল্প। কখনও কবিতার মতো ঝরনা, কখনও নিটোল উপন্যাসের মতো টানটান। সুনীলের নিজের কথায়, খুব ছোটবেলা থেকেই আমার ভ্রমণের নেশা। সবসময় মনে হতো, এই পৃথিবীতে জন্মেছি, যতটা পারি তা দেখে যাবো না?...একসময় জাহাজের নাবিক হবারও স্বপ্ন ছিল আমার তা অবশ্য হতে পারিনি।...কখনো রাত কাটিয়েছি গাছতলায়, কখনো নদীর বুকে নৌকায়, কখনো পাঁচতারা হোটেলে...সেইসব লেখা জমে-জমেও প্রায় পাহাড় হয়ে গেছে। প্রায় সব ভ্রমণ কাহিনি নিয়ে (কিছু হারিয়ে গেছে) পত্র ভারতীর ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ করছেন ভ্রমণ সমগ্র। এই দু’খণ্ডের আয়তন দেখে আমি নিজেই। বিস্মিত। সব লেখা যদি সংগ্রহ করা যেত, তা হলে। আরও কত বড় হতো!...এর মধ্যে ঘুরে আসা অনেক দেশের কথা লেখাও হয়নি। তৃতীয় খণ্ড হবে? হতেও পারে। মুগ্ধ বিস্ময়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তে-পড়তে মনে হয়, কবে আসছে তৃতীয় খণ্ড ? পাঠককে অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।