“মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা ৩য় খণ্ড বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের গৌরবময় মূল্যবান অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর কালরাতে দেশব্যাপী যে প্রতিরােধ যুদ্ধ গড়ে ওঠে, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। স্বাধীনতাসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২৪ বছরের ইতিহাসে হাজারাে যুগান্তকারী ঘটনার সমন্বয় ঘটেছে। এককথায় বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে এক বিশাল পটভূমি রয়েছে, যার সঙ্গে এ ভূখণ্ডের জন্য মুক্তিযুদ্ধই অবিচ্ছেদ্য পরিণতি। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত, তাহলেও স্বাধীনতাসংগ্রামের পটভূমিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি, যাকে মুক্তিসংগ্রামের ধারাবাহিকতা বলা হয়, তার বাস্তবতা এবং স্বরূপ জানা ছাড়া স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব নয়। ১৯৫২'র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২'র শিক্ষা কমিশন রিপাের্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯'র গণঅভ্যুত্থান এবং পরিশেষে ১৯৭০'র সাধারণ নির্বাচনের রায় বানচাল করার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন মুক্তিযুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তােলে। দেশের সর্বস্তরের জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণে অর্জিত এই স্বাধীনতার ইতিহাস বিশ্বের মানবমুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। একই সাথে বিশাল এই জনযুদ্ধের ইতিহাসে উল্লিখিত হয়ে আছে পুলিশ সদস্যদের বিজয়গাথা। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা' গ্রন্থটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের বিশাল কর্মকাণ্ডকে জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় এই প্রকল্প গৃহীত হয়। ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আলােচনাসভায় সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুবউদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রমের বিবরণ উপস্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সকল পুলিশ সদস্যের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান লিপিবদ্ধ করা এবং সকলের ছবি সংরক্ষণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল পুলিশ সদস্যের বীরত্বগাথা লিপিবদ্ধ করার বিষয়টিও তিনি আলােচনায় উল্লেখ করেন। একই অনুষ্ঠানে তকালীন ডিআইজি এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের গৌরবােজ্জ্বল অংশগ্রহণকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামে পুলিশ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণাধীন অভ্যন্তরীণ রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ ইমারত, হল, মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের নামকরণ এবং পুলিশ একাডেমিসহ বিভিন্ন পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা বিষয়ক পাঠ প্রশিক্ষণসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন। এই প্রস্তাবের সমর্থনে আলােচনাসভায় অনেকেই একমত পােষণ করেন। আইজি আজিজুল হক বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে বলে মত প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আলােচনাসভায় একইভাবে ডিআইজি এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী কর্তৃক বিষয়টি পুনরায় উপস্থাপিত হলে আইজি ইসমাইল হুসেন একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকল্পের বিষয়টি প্রস্তাবনা আকারে উপস্থাপনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ২২-৭-১৯৯৮ তারিখে আইজি মােহাম্মদ ইসমাইল হুসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা” শীর্ষক পুস্তক প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়। একই সাথে প্রকল্পের প্রয়ােজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রদানের লক্ষ্যে আইজি মহােদয়ের সভাপতিত্বে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। জনাব ইসমাইল হুসেন অবসর গ্রহণ করলে পরবর্তী আইজি এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী প্রকল্পের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে ভোরের প্রদীপ্ত সূর্য হয়ে জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান । শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় নিবেদিত এক প্রাণ তিনি ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা 3 গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন । চাকুরি-জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তাঁর সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর । পেশাগত জীবনে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যেমন লাভ করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তেমনই অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদকে (বিপিএম) এবং দুবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন। এছাড়া তিনি তিনবার ‘আইজিপি গুড সার্ভিস ব্যাজ' লাভ করেন। বর্তমানে তিনি অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পদমর্যাদায় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বহুমুখী প্রতিভা ও অসাধারণ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হাবিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা ও সংকলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং তা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সম্পাদনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা, পিতা তুমি বাংলাদেশ এবং ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা গ্রন্থসমূহ। বাংলাদেশের বেদে এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সমাজের মূলধারায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। তাঁর অতল মানবিক গুণের ফসল পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, যা করোনা রোগীদের প্লাজমা এবং ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট সরবরাহ করে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।