‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ’ বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথাঃইতিহাসের এক মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনে জন্ম নেয়া এ নবজাতক বায়োবৃদ্ধির সাথে সাথে তাঁর জ্ঞান, মেধা, সচেতনতা, দুর্দান্ত সাহস, মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং আপোষহীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি বাঙালির অর্থনৈতিক মক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এতই দৃঢ়চিত্ত এবং প্রতিজ্ঞবদ্ধ ছিলেন যে, পাকিস্তানি ২৩ বছরের শাসনামলে প্রায় ১৩ বছর ৯মাস কারাভোগ করেছেন কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কখনো আপোষ করেননি।মন্তিত্বের লোভ এবং ফাঁসির রজ্জু কোনটিই তাঁকে আদর্শ থেকে বিচুত্য করতে পারেনি।১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণ করেননি বাঙালির মুক্তিসনদ ৬ দফার সাথে আপোষ করে মৃত্যুভয়কে জয় করে বাঙালির স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন তিনি।পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পূর্বে শেষ মুজিব ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।তাঁর আহ্বানে তাঁর নামেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো এবং সে কারণেই দেশের মানুষে তাঁকে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক হিসেবে অভিষিক্ত করেছেন।বঙ্গবন্ধূ ও স্বাধীনতা এবং দুইটি শব্দ বাঙালি জাতির কাছে পরস্পর সামর্থক শব্দ।বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির আবহমানকালের সাংস্কৃতির ঐতিহ্য থেকে জন্ম নেয়া একজন মহাপুরুষ।তিনি তাঁর কৃতকর্ম ও আদর্শের জন্য বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক এক গুরুত্বর্পূণ অধ্যায়কে অধিকার করে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। গণপরিষদ ও সংসদে বঙ্গবন্ধু' বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা কথাঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে এই দেশের সমাজের উত্থাপন-পতন, নবজাগরণ ও স্বাধীনতা ইত্যাদির ইতিবৃত্ত বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সর্বাগ্রো ও সর্বত্র স্মরণ করতে হয়। আবার শেখ মুজিব সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে কিম্বা তার জীবন ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে তাঁর জন্মভূমি তথা আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানূষ, বাংলাদেশের পরিবেশ, সমাজ, ঐতিহ্য সবকিছুই একসঙ্গে সামনে ও পেছনে এসে ভিড় করে। ইতিহাসের মূল লক্ষ্য একটি সমাজ ও জাতি। কিন্তু কোনো কোনো সমাজ বা জাতির মধ্যে এমন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে যাঁর কার্যকলাপ সেই সমাজ ও জাতিকে নতুন মাহাত্মে অভিষিক্ত করে, নতুনভাবে আলোড়িত করে, একটি দেশ, সমাজ বা জাতিকে নবম্ম দান করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এমনই এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তি বিশেষের কল্প-বিলাসের অভিব্যক্তি হয় না। হতে পারে না। ইতিহাস এগিয়ে চলে তথ্যের ওপর ভর করে। তথ্যের সাহায্যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় বলেই ইতিহাস একটি বিজ্ঞান। ত্যে বিশ্লেসনে একজন আর একজনের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। বিশ্লেষণ পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসে নিরেট ফল ঘোষণায় নিজস্ব মনগড়া কথা বলবার কোনো অবকাশ নেই। জনগণের সামগ্রিক সংগ্রামকে সামনে রেখে সংগ্রামের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনকে ও তাঁর কালের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অন্যান্য ঘটনাবলীকে তথ্যের সাহায্যে তুলে ধরলেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যে এক ও অভিন্ন, একে অপরের পরিপূরক তা উপলব্ধি করা যাবে। বাঙালির ইতিহাসের এক পর্বের অমর পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাঁর অদম্য সাহস ও অকুণ্ঠ পরিশ্রম, গভীর আত্মবিশ্বাস ও কাঠোর আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক শক্তি ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা মানুষের আপনজন হওয়ার ও তাদের বিশ্বাস উৎপাদনের পারঙ্গমতা- এসবই তাঁকে রাজনৈতিক কর্মী থেকে জননায়কে রূপান্তরিত করেছিলো। তিনি নিজের বাঙালি সত্তার উন্মোচন ঘটিয়েছিলেন, দেশবাসীকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন সেই সত্তার জাগরণ ঘটিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম স্বদ্শেভূমি গড়ে তুলেছিলেন। সূচিপত্র পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদে (১৯৫৫-১৯৮৫) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ গভর্নর ও গভর্নর জেনারেলের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকা উচিত নয় পূর্ববঙ্গের জনগণকে আর কতদিন ধোঁকা দেবেন গভর্নর জেনারেল জনগণের নির্বাচিত নন তাঁকে অসীম ক্ষমতা প্রদান বঞ্ছনীয় নয় ক্ষমতাসীন দলের অগনতান্ত্রিক কার্যকলাপ সংসদের কার্যসূচি বাংলায়ও মুদ্রিত হওয়া আবশ্যক সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতা নিশ্বিচকরা প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার পাওয়ো উচিত পাকিস্তানের উভয় অংশে চাকুরিক্ষেত্রে সমতা চাই প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করা উচিত বাংলাও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হওয়া উচিত প্রতিরক্ষা, মুদ্রা ও পররাষ্ট্র বিষয়াবলীই কেন্দ্রীয় সরকার দেখতে পারেন পাকিস্তানের উভয় অংশের সমতা বিধান করতে হবে সংবিধান থেকে জনবিরোধী নিরাপত্তা ও নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে জমিদারদের সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাজেয়াপ্ত করতে হবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে রাষ্ট্রভাষা কি হবে জাতীয় সংসদের অনূমোদন ছাড়া সামরিক শাসন জারী করা যাবে না ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করুন জাতীয় সংসদে ২০ টি মহিলা-আসন সংরক্ষন করুন যু্ক্ত নির্বাচন বাঞ্চনীয় শহীদের রক্ত যেন বৃথা না য়ায় গণপরিষদ একটা সুপ্রীম বডি শাসনন্ত্র ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য নির্দেশনামা এই শাসনত্নত্র শহীদের রক্তে লেখা শাসনতন্ত্র: গণপরিষদ সদস্যদের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি গোপন হত্যা দেশের মঙ্গল বয়ে আনে না সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা প্রসঙ্গে বাংলার মাটিতে ষড়যন্ত্র চলবে না গণতন্ত্রের নামে গুপ্তহত্যা চলে না জহুর আহমদ চৌধুরীর গুণের ইতিহাস আছে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো পরিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় : জাতির কলঙ্ক মোচন' ফ্ল্যাপে লিখা কথাঃ দেশ-বিদেশে নেতা অনেকেই জন্মেন। তাঁর কেউ ইতিহাসের একটি মাত্র পংক্তি, কেউ একটি পাতা, কেউ বা একটি অধ্যায়। আবার কেউ বা নিজেই সমগ্র ইতিহাস। আর বঙ্গবন্ধু সারা বাংলার এই সমগ্র ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুত্রাসকে উপেক্ষা করে একটি ভূ-খণ্ডকে বাঙালির চিন্তা- চেতনায় সত্য করে তুলেছেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের পত্তন করেছেন। এখানেই তঁঅর নেতৃত্বের ঐতিহাসিকতা। এই ঐতিহাসিকতা অর্জন ও স্বদেশকে প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার পথে দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বার্থবাদীদের কাছ থেকে পদে পদে বাঁধা পেয়েছেন। এই লড়াই করতে করতেই একদিন তাঁকে দিতে হয়েছে নিজের জীবন! নির্যাতিত মানবাত্মার ক্রন্দন বঙ্গবন্ধুকে অস্থির, অশান্ত করে তুলেছিরো। এজন্যেই তিনি হুংকার তুলেছিলেন সকল প্রকার দুঃশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে, ভূমিকা নিয়েছিলেন অমিত এক অক্লান্ত যোদ্ধার। ঊনবিংশ শতাব্দীর গীতিকবি ‘ল্যামারটিন’ তাঁর স্বদেশ ফ্রান্সের বৈদেশিক মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে রাজনীতির মূল কথাটি ব্যক্ত করে উল্লেখ করেন- `Affection, always affection for the people and the people in return will lend their hearts' ‘বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এই কথাগুরো সর্বোতভাবে প্রযোজ্য। ল্যামারটিন আর বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এক শতাব্দী কালের ব্যবধান। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁদের দুজনের অভিজ্ঞতা প্রায় একরকম। তাঁদের দুজনকেই আকুল করে তুলেছিলো নিপীড়িত ও শোষিত মানবাত্মার আকুল ফরিয়াদ। উভয়েই জনগণকে ভালবেসে তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। জালিমদের হাত থেকে অসহায় মানুষকে বাঁচাতে দুজনেই নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন। তাঁরা প্রতিদানে পেয়েছিলেন জনগণের প্রাণঢালা ভালোবাসাও। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ট্রাডিশন্যাল রাজনীতির বিরুদ্ধে ফুটে ওঠে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। রাজনীতিকে তিনি রাজনীতি হিসেবে দেখেছেন। নিজেকে একান্ত হয়ে দিয়েছেন জনগণের সাথে- তাই তাঁর কণ্ঠে ফুটে ওঠে সবার আগে- ভায়েরা আমার! এই নিখাঁদ সম্বোধন, তার জীবন ঘটনাবহুল ও বিচিত্র। কিন্তু সকল ঝড়-ঝঞ্চ্ঝা, দুঃখ-দৈন্যের মধ্যেও তাঁর সদাজগ্রত প্রাণবাদী জাতির জীবনে যে শিহরণ জাগিয়েছে তা অবিস্মরণীয়, যা আজো অকেজো হয়ে পড়েনি। গভীর নিশিথে ভেসে আসার দূরাগত বংশীধ্বনির মতো তা আজও আমাদের মনকে অশান্ত করে তোলে। যে গিরিমুখ থেকে একদিন অনলবর্ষী বক্তব্য নির্গত হয়েছিলো তা সত্যিই এক জ্বালাময় আগ্নেয়গিরি। শাসকরা-শোষকরা তার তাপ সইতে না পেরে বঙ্গবন্ধুকে বারবার সমাজকে দেশের স্বাধীনতার জন্যে সেদিন রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। যার পর্যায়ক্রমিক আবর্তনে আমরা পেয়েছি- বাহান্নর ভাসা আন্দোলন এবং এর বন্ধুর পথ বেয়ে পরিণতি লাভ করেছে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রাম- ফলশ্রুতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ।
Title
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও হত্যার রায় সমন্বয়ে গ্রন্থিত ৫টি বই
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।