"বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: কামরুদ্দীন আহমদ তার বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী বইটিতে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত প্রায় এক দশকের স্মৃতিচারণা করেছেন। এ দেশের তথা বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে এই সময়টি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই কালপর্বেই পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের ব্যাপারটিও এ সময়ই ঘটে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন প্রস্তুতি ও প্রচারণায় কামরুদ্দীন আহমদের গুরুতপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ফন্ট মন্ত্রিসভা গঠন ও সরকারের পরবর্তী ভাঙাগড়া, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতি ও সেখানে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, চক্রান্ত ইত্যাদির তিনি ছিলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
কলকাতায় ও রেঙ্গুনে কুটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সূত্রে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপােড়েন এবং সমকালীন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহেরও তিনি ছিলেন একজন সাক্ষী। সােহরাওয়ার্দীর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘ অধিবেশনে তিনি যােগ দিয়েছিলেন। কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশের অনেক বিশিষ্ট ও বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। এসব অভিজ্ঞতার কথা অত্যন্ত সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে লেখক এ বইয়ে তুলে ধরেছেন। বইটিতে এমন। অনেক তথ্য আছে, যা সচরাচর অন্যত্র পাওয়া যায় না। সাধারণ পাঠকের কৌতূহল মেটানাের পাশাপাশি বইটি গবেষক ও পণ্ডিতদেরও কাজে লাগবে।
কামরুদ্দীন আহমদ জন্ম ১৯১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কিছুকাল ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে আইন পেশায় যােগ দেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা পাকিস্তান আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর গণআজাদী লীগ গঠনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগে যােগ দেন ও পরের বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রথমে কলকাতায় পাকিস্তানে হাইকমিশনার ও পরে বার্মায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমিক আন্দোলনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারাবন্দী করে রাখে। তার স্মৃতিকথা ও অন্যান্য গ্রন্থ এ দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসচর্চার মূল্যবান উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৮২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।