কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর গ্রন্থে ‘কৈফিয়ৎ' দিতে গিয়ে বলেছেন...‘আমি পন্ডিত ব্যক্তির চেয়ে জ্ঞানী লােককে বেশি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমি বৃদ্ধ পৌঢ় লােকের সঙ্গের চেয়ে যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গ বেশি পছন্দ করি। কারণ যারা পণ্ডিত তারা পণ্ডিত্য দেখাবার জন্য অতীতের পণ্ডিতদের কথাগুলি আওড়িয়ে যায়, তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুন কথা বড় শুনি না। অন্যদিকে যারা বৃদ্ধ বা পৌঢ় তারা তাদের বিগত জীবনের ইতিহাস পর্যালােচনা করতেই ভালবাসেন- এদের দৃষ্টি অতীতের দিকে। আমি শুনতে চাই আগামী দিনের কথা-ভবিষ্যতের রূপরেখা। যারা বিগত দিনের মধ্যে বেঁচে থাকতে চায় তাদের আমি মৃত বলে মনে করি। মানুষের সুবেশ ও সুন্দর দৈহিক অবয়ব আমাকে আকৃষ্ট করে না ততটা যতটা করে মানুষের অন্তরের ঐশ্বর্য আর সংস্কৃতিবান মন। যদিও আমি জীবনের সায়াহ্নে আজ পরিশ্রান্ত। বায়রনের কথায় "My days are in the yellow leaf; The flowers and fruits of love are gone; The worn, the canker, and grif, Are mine alone"... বর্তমান গ্রন্থ ‘স্বাধীন বাংলা অভ্যুদয় ও অতঃপর' গ্রন্থে স্বাধীনতা পরবর্তী আমার দেখা কাহিনিগুলাের বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেছি সাধ্যমত।
কামরুদ্দীন আহমদ জন্ম ১৯১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কিছুকাল ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে আইন পেশায় যােগ দেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা পাকিস্তান আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর গণআজাদী লীগ গঠনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগে যােগ দেন ও পরের বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রথমে কলকাতায় পাকিস্তানে হাইকমিশনার ও পরে বার্মায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমিক আন্দোলনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারাবন্দী করে রাখে। তার স্মৃতিকথা ও অন্যান্য গ্রন্থ এ দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসচর্চার মূল্যবান উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৮২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।