“তোমরা জোর করে আমার বিয়ে দিচ্ছ –' মণীশ বললে, 'খুব খারাপ হচ্ছে কিন্তু। অনর্থক একটা জীবনকে আমার হাড়কাঠে ধরে বলি দিচ্ছ। বিয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা মানুষকে সুখী করা। অন্তত একটিকেও। ‘একটি কেন, সবাই আমরা সুখী হব'—বলি আমরা, ‘তোমার এই বিয়েতে।' 'মানুষ মানে মেয়েমানুষ। অন্তত একজনার সর্বপ্রকার সুখের ভার নিজের কাঁধে নেওয়া মানে হচ্ছে উদ্বাহ। অর্থাৎ কিনা উত্তমরূপে বহন করা।' 'বাহন হিসেবে তুমি নেহাৎ অধম নও তো', আমাদের জবাব, 'সিংহ না হতে পারো, কিন্তু গাধাও নও তাই বলে।' “একটি মেয়েকে সুখী করা কি সোজা কথা? আমার জীবনে নারী একেবারে এক এন. পি.—নিউ প্যারা। আনকোরা নতুন পর্ব। তার কোথায় কমা, কোথায় দাঁড়ি, কোথায় বা কোলন—কোনখানে ড্যাশ—আর কোথায় বা ফুলস্টপ-কিছুই আমার জানা নেই। 'জানতে কতক্ষণ? তোমার মতো এক তুখোড় ছেলে' 'না বাপু, তোমরা বুঝছ না। নিজে দুঃখে থাকি সে এক, নিজের কষ্টে কিছুই যায় আসে না ; কিন্তু অন্য আরেকজন আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে, কি আমাকে নিয়ে অসুখী- -এ কথা জানলে স্বস্তিটুকুও যায়। সুখে আমি নেই বটে কিন্তু স্বস্তিতে আছি। সুখ আমার চাইনে, কিন্তু এই স্বস্তিটুকুও হারাতে আমি রাজি নই। অহেতুক এক বিয়ে করে—' ‘অহেতুক কেন? মেয়েটি দেখতে তো ভালোই। একটু বাড়ন্ত গড়নের হলেও অসুন্দরী নয়। হয়ত একটু বয়েস হয়ে থাকবে—কিন্তু চব্বিশ পঁচিশের আগে কোন মেয়ের বিয়ে হচ্ছে আজকাল? দেখতে বেশ সুশ্রী, তুমি দেখতে চাও মেয়েটিকে ?” 'দরকার করে না। তোমরা বন্ধুজন, কেউ আমার মন্দ চাও না তা জানি। তোমরা যখন দেখে পছন্দ করেছ, তখন—কিন্তু আমার আপত্তি তো সেদিক থেকে নয়। 'এক গরিবকে কন্যাদায় থেকে উদ্ধার করছ।' সে কথায় কান না দিয়েই সে বলে যায়— 'আমার প্রশ্ন হচ্ছে ব্যক্তিগত সুখ-অসুখের। আর, তা আমার নিজের ব্যক্তিগত দিকের না। বউকে সুখী করব, সুন্দরী বউ নিয়ে সুখ করব, সে সময় আমার কই? প্রুফ দেখার চাকরি করি। অষ্টপ্রহর বাঁধা আমার, পার্টটাইমের কাজ পাঁচ জায়গায়। প্রকাশকদের যে সব প্রুফ এসে জমে, সকাল সাড়ে ন'টা অবধি বাড়ি বসে তাই দেখি, তারপর নাইতে খেতে হয়, তারপর ছাপাখানার প্রুফ দেখতে যাই। সেখান থেকে সন্ধেতে ফের আবার এক খবরের কাগজের আপিসে। সেখানেও সেই প্রুফ দেখা। তাদের কাজ সারতে রাত সেই এগারোটা। কোনো কোনোদিন আবার বারোটা বাজিয়ে 'বাড়ি ফিরি।'—বলে নিজের রসিকতায় নিজেই সে একটুখানি হেসে নেয় ।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১৩ ডিসেম্বর, ১৯০৩ ( বাংলা,১৩১০-এর ২৭ অগ্রহায়ণ)। প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক। কবিতা-রচনা দিয়ে সাহিত্য-জীবনের শুরু।প্রথম কবিতা বেরোয় ভারতী পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশিত বই দুটিও -- 'মানুস' ও 'চুম্বন' -- কবিতার। দুটিই প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। তারপর অজস্র লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ, নাটক এবং তুলনাহীন অজস্র হাসির গল্প। লিখেছেন ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা ও ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর নামের অনন্য স্মৃতিকথামূূলক দূটি বই। প্রবন্ধের বই : মস্কো বনাম পন্ডিচেরি ও ফানুস ফাটাই। নাটকের গ্রন্থ : যখন তারা কথা বলবে। বিচিত্র জীবন ছিল তার। রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন, রাস্তায় কাগজ ফেরি করেছেন, ফুটপাথে রাত্রিবাস করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, আজীবন মেস-জীবন যাপন করেছেন । করেন নি যা, তা হল বিয়ে।