"শিবরামের মজার গল্প"বইটির ভূমিকা: শােনা যায় শিবরাম চক্রবর্তীর রচনা এখনকার ছােটরা কম পড়ে। এর নানান কারণও শােনা যায়। এক সত্য হল এখনকার উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত মহলের অনুকরণে নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরাও না-খেয়ে না-দেয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ার চেষ্টা করছে, ফলে তারা বাংলাগল্পের বই-ই পড়ছে কম। আরেক সত্য হল বর্তমানে বাংলাভাষার ছােটদের সাহিত্য রক্তাল্পতায় ভুগছে। বিচিত্র রসের আয়ােজন এ-সাহিত্যের একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে হ্যারি পটারের পাঠকদের মাতৃভাষার সাহিত্যের দিকে মন টেনে রাখার মতাে সম্পদেরও অভাব ঘটছে। বাংলা পড়লেও, হালের প্রজন্ম হ্যারি পটারের অনুবাদই পড়ছে; হর্ষবর্ধন-গােবর্ধন-টেনিদা-ফেলুদা পড়ছে না— জানতেও পারছে না যে শিবরামে-সত্যজিতেও অনেক রকম হ্যারি পটার আছে। | এই অবস্থায় বাংলা সাহিত্যেরই উজ্জ্বল অতীতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও বালকমনের পুষ্টি ঘটানাে যায়। ফল ফলানাে যায় ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন বলে ‘পরধনলােভে মত্তদের আমন্ত্রণ জানিয়ে। এই ‘বিবিধ রতনের মধ্যেও শিবরামের ঔজ্জ্বল্য নবকিশাের-যুবকদের চোখ ধাধাবে যদি বিস্মরণের ঘূর্ণাবর্ত থেকে তাঁকে উদ্ধার করা যায়। ধন্যবাদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে শিবরামের উদ্ধারকার্যে তাদের এই সময়ােচিত প্রয়াসের জন্য। অদূর ভবিষ্যতেই গবেষকমহলে প্রশ্ন উঠতে পারে—বিশ শতকের কথাসাহিত্যে শিবরাম চক্রবর্তী-নামের লেখক কতজন ছিলেন? যিনি শিশু-কিশাের সাহিত্যের আসরে অনাবিল মজার গল্পের ভাণ্ডারী ছিলেন, তিনিই কি কবিগুরুর জীবন ১২ বছর অবশিষ্ট থাকতেই ‘চুম্বন’ ও ‘মানুষ’-নামের অতি-উগ্র আধুনিক কবিতার দুটি জনপ্রিয় বই লিখেছিলেন? মানুষ’-‘চুম্বনে’র (১৯২৯) কবিই কি গুরুগম্ভীর সমাজতাত্ত্বিক প্রবন্ধ আজ এবং আগামীকাল (১৯২৯), মস্কো বনাম পন্ডিচেরি’ (১৯৪৩) লিখেছিলেন? হর্ষবর্ধন-গগাবর্ধন সিরিজের গল্পকারই কি বঞ্চিত মানুষদের নিয়ে লেখা ‘চাকার নীচে' (১৯৩০) এবং যখন তারা কথা বলবে’র (১৯৪৯) নাট্যকার ছিলেন?
তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১৩ ডিসেম্বর, ১৯০৩ ( বাংলা,১৩১০-এর ২৭ অগ্রহায়ণ)। প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক। কবিতা-রচনা দিয়ে সাহিত্য-জীবনের শুরু।প্রথম কবিতা বেরোয় ভারতী পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশিত বই দুটিও -- 'মানুস' ও 'চুম্বন' -- কবিতার। দুটিই প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। তারপর অজস্র লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ, নাটক এবং তুলনাহীন অজস্র হাসির গল্প। লিখেছেন ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা ও ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর নামের অনন্য স্মৃতিকথামূূলক দূটি বই। প্রবন্ধের বই : মস্কো বনাম পন্ডিচেরি ও ফানুস ফাটাই। নাটকের গ্রন্থ : যখন তারা কথা বলবে। বিচিত্র জীবন ছিল তার। রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন, রাস্তায় কাগজ ফেরি করেছেন, ফুটপাথে রাত্রিবাস করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, আজীবন মেস-জীবন যাপন করেছেন । করেন নি যা, তা হল বিয়ে।