ফিকে হয়ে যাওয়া নীল রঙের শাড়ির আঁচলের মত দেখাচ্ছে যমুনা নদীকে। ওপরে ঢিমেতালে ছুটে বেড়ানাে মেঘের ছায়া। তার তলে এই যমুনার জলে ঝিরিঝিরি বাতাস। বাতাসের স্পর্শে নদীর পিঠ দেখে মনে হচ্ছে নতুন টিনের চালে রােদের বিভ্রম। সেই জলে মুখ ধুয়ে এসে ভ্যানগাড়িতে উঠে বসলাে পলি, মিরান, পরিতােষ আর হালিম। ওদের আগের ভ্যানগাড়িতে ছিল নীলিম, সাথি, তমাল আর রফিক। পলি আর মিরানেরা এসেছে গােপালপুর থেকে। ভুয়াপুর থেকে এসেছে নীলিম আর সাথিরা। গন্তব্য বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব। জায়গাটার নাম ইব্রাহিমাবাদ। টাঙ্গাইল জেলার শেষ সীমানা। এরপর যমুনা নদী। তারপরের স্টেশন সয়দাবাদ। সেখান থেকে সিরাজগঞ্জের শুরু। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব বলেই টিকিটের গায়ে লেখা আছে। বগি জ। আসন সি টুয়েন্টি ওয়ান, ডাব্লিউ টুয়েন্টি টু। সি টুয়েন্টি থ্রি, ডাব্লিউ টুয়েন্টি ফোর। এগুলােই শােভন চেয়ার। টিকিট কেটে এনেছে পলির দুঃসম্পর্কের বড়ােভাই মানসুর। সে-ও যাচ্ছে। তবে এ পথে না। এত দীর্ঘ পথ ভ্যানগাড়িতে বসে যাওয়া সম্ভব না বলে গােপালপুর থেকে বাসে ওঠে এলেঙ্গা, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব। পলি ওরা আগেই বেরিয়েছিল। ভুয়াপুর এসে নীলিম ওদের সঙ্গে আসবে বলেই দেরি হয়ে গেল। এদিকে নীলিমদের থামতে বললেও থামলাে না। পলির খুব ইচ্ছে হল যমুনার জলে মুখ ধুয়ে নিতে। মিরান আমতা আমতা করলেও রাজি হয়ে যায়। দেখাদেখি পরিতােষ আর হালিমও। দীর্ঘ পথ রােদের মধ্যে এই ভ্যানগাড়িতে আসতে আসতে অস্থির লাগছিল। এখন ভালাে লাগছে বেশ। ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে ভ্যান থেকে ওরা নেমে যায়। জায়গাটা সব সময় নির্জন থাকে। সেতু উন্মুক্ত হয়েছে এক বছর। তীরবর্তী এলাকায় নতুন নতুন আকাশমণি গাছের চারা লাগানাে হয়েছে। এদিকে কাউকে পাওয়া যায় না। এখান থেকে বালির মধ্যে হেঁটে যেতে হয় প্রায় দেড় কিলােমিটারের মত।
Lutfor Hasan লুৎফর হাসান এর জন্ম নবগ্রাম, গোপালপুর, টাঙ্গাইল এ । জন্ম তারিখ – ১৬ ফেব্রুয়ারি। লুৎফর হাসান কাজ করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। লিখছেন গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, মুক্তগদ্য এবং কবিতা। সব মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩১ । লেখালেখির বাইরে লুৎফর হাসানের সম্পৃক্ততা আছে গানের সঙ্গেও। ‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ শিরোনামের গান গেয়ে গায়ক হিসেবেও তিনি প্রতিষ্ঠিত। গান গাওয়ার পাশাপাশি শতাধিক জনপ্রিয় গানের গীতিকারও তিনি। বর্তমানে দেশের শীর্ষ এক অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।