"তোত্তোচান: জানালার ধারে ছোট্ট মেয়েটি" বইয়ের সামারি: বইটির বিভিন্ন অধ্যায় জাপানের বিভিন্ন ক্লাসে পাঠ্য করা হয়েছে। বইটি ৫৫ লাখের ও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। বইটি লেখিকার নিজের জীবনের কাহিনী। জাপানে তাঁর ছোটবেলার স্কুল জীবন নিয়ে লেখা। তাঁদের স্কুলটি টিকে থাকে ১৯৩৭-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত, এরপর বোমা হামলায় স্কুলটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। যিনি এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁদের প্রধান শিক্ষক উনি ৬৯ বছর বয়সে মারা যান। স্কুলের নাম ছিলো তোমায়ে গাকুয়েন বিদ্যালয়, যার প্রধান শিক্ষক ছিলেন সোশাকু কোবাইয়াশি মশাই। তাঁদের স্কুলঘরটি ছিলো মূলত রেলগাড়ির কামরা। ৬টি রেলগাড়ির কামরায় ক্লাস হত, একটা কামরায় ছিলো পাঠাগার। স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতি ছিলো খুবই অসাধারণ। সেখানে ক্লাসের শুরুতেই সারা দিন কি কি পড়ানো হবে বলে দেয়া হত, এখন বাচ্চারা যার যেমন খুশি যে কোন বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করতে পারতো। বইটি অবশ্যই যে কোন বাবা মা এবং অবশ্যই যে কোন দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজনের পড়া উচিত। "তোত্তোচান: জানালার ধারে ছোট্ট মেয়েটি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘তােত্তোচান’ ১৯৮১ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তার আগে এটি ধারাবাহিকভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল। পরবর্তীতে বইটির অনুবাদ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তােত্তোচান আমাদের দুই বাংলায়ও অনূদিত হয়েছে। বইটি পৃথিবীর সকল দেশের পাঠকের চিন্তাজগতে দাগ কেটেছে। কারণ এই বই আমাদের দেখিয়ে দেয় শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কত সুন্দর সব চিন্তাভাবনা করা সম্ভব, যেমন করতেন প্রধানশিক্ষক সােশাকু কোবাইয়াশি। লেখক আমাদের জানিয়েছেন কোবাইয়াশি মশাই খুব তেতাে একটি কথা বলতেন—শিশুরা জন্মায় খুব ভালাে মানুষ হিসেবে কিন্তু বড়ােদের কুপ্রভাব তাদের স্বভাব বদলে দেয়, তাই শিশুদের সম্পূর্ণ স্বাধীন মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে দেওয়াই মানবিক শিক্ষাব্যবস্থার মূল।
তেসুকো কুরােয়ানাগির জন্ম টোকিওতে, ১৯৩৩ সালে। তিনি টোকিও সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে অপেরা সঙ্গীত বিষয়ে লেখাপড়া করেন ও তালিম নেন। কিন্তু পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন একজন গুণী অভিনয়শিল্পী এবং রেডিও টেলিভিশনের অতি জনপ্রিয় উপস্থাপক। দর্শকদের ভােটে পরপর টানা পাঁচ বছর তিনি জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মনােনীত হন। খুব দ্রুতই তাঁর থলেতে জমা হতে থাকে সমানজনক নানা পুরস্কার। ১৯৭৫ সাল থেকে জাপানের ইতিহাসের প্রথম দৈনিক টকশাে উপস্থাপনা করতে শুরু করেন, যার নাম ছিল ‘তেৎসুকোর ঘর’। তার প্রায় সকল অনুষ্ঠানই দর্শক জনপ্রিয়তা পায়। জাপান ও পৃথিবীর কল্যাণ নিয়ে সত্যি সত্যি চিন্তা ও সাধ্যমতাে কাজ করেন। তিনি লেখক তেৎসুকো কুরােয়ানাগির জীবন ও কর্ম দেখে বােঝা যায় রেলগাড়ি ইশকুলের প্রধানশিক্ষক মশাই নিজ হাতে কত সুন্দর একটি গাছের চারা রােপণ করে গেছেন, যা এখন ফুলে ফুলে শােভিত।