'Woman in Islam' গ্রন্থটি আকারে ক্ষুদ্র হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী দু'জন বিদগ্ধ ইউরোপীয় মহিলা, একজন ইংরেজ এবং অপরজন জার্মান, ইসলাম সম্পর্কে তাঁদের সুচিন্তিত বক্তব্য এ গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন। বইটি মূলতঃ ১৯৭৬ সনের ৩-১২ এপ্রিল লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক সেমিনারে প্রদত্ত ভাষণের উপর সংকলিত। বক্তব্যের মূল যুক্তি ইসলামের মূল উৎস কোরআন ও হাদীস থেকে উৎসারিত। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এ খুদে বইটির আরবী ও ইন্দোনেশীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে প্রাচ্য- প্রতীচ্যের অমুসলিম দেশগুলোতে ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে নানা ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে। ইসলাম নারীকে যে সম্মান ও অধিকার প্রদান করেছে তা যথাযথভাবে তুলে ধরা হলে এ ভুল বুঝাবুঝির অনেকখানি দূর হবে। এ ছোট্ট বইটিতে লেখিকাদ্বয় এ প্রচেষ্টাই করেছেন । ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারীর মর্যাদার সাথে তাঁরা পাশ্চাত্যের মহিলার সামাজিক মর্যাদার এক তুলনামূলক আলোচনা করেন । ভাবাবেগ পরিত্যাগ করে শুধু কোরআন ও হাদীসকে সূত্র হিসাবে উদ্ধৃত করে তাঁরা তাঁদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। বিদগ্ধ শ্রোতামন্ডলীর সমালোচনায় তাঁদের যুক্তি আরও ব্যাপ্তিলাভ করেছে। এ সব মিলিয়েই এ সংকলনের বক্তব্য সমুপস্থিত।
ফাতিমা হেরেন এর পুরো নাম ফাতিমা হেরেন সারকা গ্রিম। ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পূর্বে খ্রিস্টান থাকা অবস্থায় তার আসল নাম ছিল হেলগা লিলি উলফ। আল্লামা মুহাম্মদ আসাদ ও মাওলানা মওদুদীর সাহিত্যের পাশাপাশি জার্মান ভাষায় ইসলামিক সাহিত্য অধ্যয়ন করার পর, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি কুরআনের অনুবাদক, জার্মান অনুবাদক, লেখক ও ইসলামিক পণ্ডিত হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ‘ইসলাম এবং জার্মানিতে মুসলিম সম্প্রদায়’ কে তার প্রিয় বিষয় করেছেন। তিনি "Die Bedeutung des korans Text und Commentar" শিরোনামে জার্মান ভাষায় ৫ খন্ডে কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর লিখেছিলেন। তিনি পবিত্র কোরআনের অনুবাদের জন্য একটি গাইড বইও লিখেছেন। ফাতেমা একজন ভালো লেখিকা। তিনি মরিয়ম রাইসমানের সাথে তাহা জে আলওয়ানি এবং ইমাদুদ্দিন খলিলের বই ‘দ্য কোরান এন্ড সুন্নাহ’ অনুবাদ করেছেন। এ ছাড়া ইসলামিক আকিদা, ইসলামের সদস্য, ইসলামি পরিবার ব্যবস্থা এবং বর্ণ ও নারীর ইসলামিক আচার-ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য বই লিখেছেন তিনি। তিনি অন্যান্য পণ্ডিতদের বই জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। জার্মান ভাষায় তাঁর লেখা ধর্মীয় বই তথা ইসলামের প্রকাশনার রয়েছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং তার ইসলাম গ্রহণের ফলাফলও ছিল ব্যাপক। ফাতিমা ১৯৮৩ সালে কুরআন অনুবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে তিনি একা এটি করতে পারবেন না। তিনি একটি দল গঠন করেছিলেন এবং তাদের সাথে অনুবাদের কাজ করেছিলেন। ফাতিমার জন্ম ১৯৩৪ সালে মিউনিখে এবং মৃত্যু ২০১৩ সালে হামবুর্গে। তিনি কার্ল ফ্রেডেরিক অটো উলফের মেয়ে। তার বাবা ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছিলেন এবং নাৎসিদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। নাৎসিরা ক্ষমতা হারানোর পর উলফ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, কারাবরণ করেছেন, দণ্ডিত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে অসুস্থতার কারণে মুক্তি পান। ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে তার মেয়ের প্রভাবে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। যখন তিনি মারা যান মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তেও মেয়ের নির্দেশনায় তিনি ইসলামী বিধি-বিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে ইসরামের বিধি-বিধান অনুযায়ীই তাকে দাফন করা হয়। কঠিন সময়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও ফাতিমা তার সাংবাদিকতা শিক্ষা শেষ করেছেন। তিনি তার চেক বংশোদ্ভূত মুসলিম স্বামীর সাথে কিছুদিন চেকোস্লোভাকিয়ায় ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে জার্মান বংশোদ্ভূত মুসলিম আব্দুল করিম গ্রিমকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার সময় কাটিয়েছেন জার্মানিতে ইসলামিক সম্প্রদায়ের মুসলমানদের সেবা করে।