"অরিত্রিকা, ওইখানে যেওনাকো তুমি" বইয়ের কিছু কথাঃ ছা-পোষা একটা কেরাণির চাকরি, সস্তায় কেনা চারটে শার্ট, সুতো ওঠা প্যান্ট আর মলিন জুতো পরে জীবন কাটাতে থাকা শওকতকে আলাদাভাবে চোখে পড়ার কোনো কারণ নেই। সিটি কর্পোরেশনের বিশাল ময়লার ডাস্টবিনের পাশে প্রায় অদৃশ্য এক গলির কংকালসার তিনতলা একটা দালানে রানুর সাথে ওর জীবন কোনরকমে পার হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু একদিন ডাক পড়ে গেলো এম.ডি আনিসুজ্জামানের কামরায়। জানালেন, অফিস শেষে গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস আনতে ওকে যেতে হবে কোথাও। কাওকে কিছু বলা যাবে না। গিয়ে পরিচয় হলো এক টেকো, রক্তমাখা, ভূড়িঅলা কসাইয়ের সাথে। বহু বছর আগে চৌধুরি বাড়ির ছোটো ছেলে এহসান প্রায় তিন মাস পর বাড়িতে ফিরে এসেছিলো। সাথে ছিলো পাঁচ-ছয় বছর বয়সী এক শিশু। সে জানালো, এই ছেলের ঝামেলা আছে। যেই ঝামেলার কথা শুনলে অনেকেরই ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠে। এলভিস হতে চাওয়া তরুণ ওয়াসি’র আগামসি লেনের বাড়িতে একদিন ত্রিদিব বমি করে ভাসিয়ে দিলো। পাকস্থলী উগড়ে বেরিয়ে এলো কুচকুচে, লম্বা কালো একগাদা চুল। বাথরুমের মেঝে ভেসে গেলো টাটকা-কালো চুলে। এর উত্তর যার কাছে আছে সে বিশ্বাস করে, মিথ্যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত শোনালে সেটা একসময় সত্য যায়। কিন্তু ৩৫০০ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা ‘সে’ কি এই সত্য গোপন রাখতে দিবে? প্রতিদিনকার মতো বাড়ি ফিরছিলেন একদিন আনিসুজ্জামান। গাড়ি থেকে নেমে দেখলেন বহু বছরের পরিচিত গলি, রাস্তা, বাড়ি - সবকিছু পাল্টে গিয়েছে। কোথাও কেউ নেই। কোনো মানুষ নেই। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন এই ভয়, এই জগত কোনোভাবেই পৃথিবীর হতে পারে না। এই আতংকের জন্ম অন্য এক জগতে, অন্য এক ভুবনে। ‘অরিত্রিকা, ওইখানে যেওনাকে তুমি’ অন্ধকারের গল্প। আতংক আর অসাড়তার গল্প। কংক্রীটের জঞ্জালের ছায়ায় লুকিয়ে রাখা গল্প। প্রতিদিনের ক্লান্তি-যাপন শেষে আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাই না বলে এই আতংক শুধু ছায়াতেই থেকে যায় ...