"নজরুল মানস" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আমাদের সত্তা, আমাদের অস্তিত্ব-ঐতিহ্যের বিরাট অংশ জুড়ে আছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রবল ঝঞা ও দ্রোহ নিয়ে তাঁর আগমন। দ্রোহ চেতনার জারক রসে সঞ্জীবিত করতে চেয়েছেন তিনি বাঙালি পাঠক মানসকে। তাঁর কাব্যসম্ভারে বাংলা কাব্য পরিমণ্ডল যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি পরাধীন জাতির চৈতন্যের মূলে উপর্যুপরি ঘা লেগেছে। প্রায় দুইশত বছরের নিষ্পেষণে পরাধীন একটা জাতি যখন প্রায় মুমূর্ষ, অস্তিত্ব সঙ্কটে নিপতিত তখন নজরুল বীণার তারে প্রলয়ের সুর তুলে এগিয়ে এলেন। আবাল্য সংগ্রাম-সংঘাতের মধ্য দিয়ে। জীবনের প্রতিটি স্তরকে, প্রতিটি পর্যায়কে তিনি চিনেছিলেন গভীরভাবে। চিনেছিলেন দারিদ্র্য, সমাজে প্রচলিত বৈষম্যের স্বরূপ, অধীনতার গ্লানি। এই বােধগুলিই তাঁকে বিকশিত করেছিল, করেছিল মহাদ্রোহী। যার ফলে মহৎ মর্যাদার কবিখ্যাতিতে অভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। কবি নজরুল ছিলেন লেখক সজীদা খাতুনের পারিবারিক আত্মীয়ের মতাে। স্কুল ফাইনালের পর প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সােহরাব হােসেনের নিকট টানা তিন বছর শিখেছেন নজরুলসঙ্গীত। দেশভাগের পর রবীন্দ্রবর্জনের রাজনীতির বিপক্ষে এবং বাঙালিত্বের চর্চা অব্যাহত রাখবার প্রয়ােজনে রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি নজরুল-চর্চা ও ভাবনাও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রয়ােজনীয় হাতিয়ার হয়ে থেকেছে। নজরুলের সাথে পারিবারিক অভিজ্ঞতা, আবেগ উচ্ছ্বাস। প্রকাশে নজরুল, নজরুল সঙ্গীতে প্রেম ও বিরহের ব্যাকুলতা, নজরুল কাব্যের আধুনিকতায় প্রেম ও নারী অনুষঙ্গ, গদ্যরচনায় নজরুল মানস, ব্যক্তিগত পত্রাবলিতে নজরুল এবং নজরুলের ‘রাক্ষুসী’ গল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলােচনাসহ মূলত নানাসময়ে নজরুলের গান-কবিতা আর প্রবন্ধ থেকে নজরুল-পরিচয় অনুধাবনের চেষ্টার ফসল এই গ্রন্থ ‘নজরুল-মানস'। বইটি নজরুলপ্রেমীদের জন্য অবশ্যই এক নতুন আহরণ হবে।
জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯৩৩, ঢাকায় । শিক্ষা কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতনের । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে । অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তার ঐকান্তিক সহযােগিতায় গড়ে উঠেছে ‘ছায়ানট’ ও ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতাে সংগঠন । ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপন, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর গ্রন্থের মধ্যে আছে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, নজরুল-মানস, সহজ কঠিন দ্বন্দে ছন্দে, শান্তিনিকেতনের দিনগুলি। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি। পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের। রবীন্দ্র-পুরস্কার, বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম উপাধি, ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী' ইত্যাদি।