"ফিরক্বা নাজিয়াহ" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ সকল মানুষ এক আদমের সন্তান। সে হিসাবে মানবজাতি পরস্পরের ভাই। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এবং তার নাযিলকৃত বিধানসমূহ মানা ও না মানার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে মুমিন ও কাফিরের বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। যারা মুমিন তারা ইহকালে সফল ও পরকালে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। পক্ষান্তরে যারা কাফের, তারা ইহকালে ব্যর্থ ও পরকালে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধীভূত হবে। কিন্তু ঈমান আনার পরেও শয়তানী ধোকায় পড়ে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় নানা বিভেদ। ফলে নূহ (আঃ)-এর যুগেই মানবজাতির মধ্যে শিরকের উদ্ভব ঘটে। অবশেষে তারা সবাই আল্লাহ্র গযবে প্লাবনে ডুবে ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে নূহের কিশতীতে উদ্ধার পাওয়া স্বল্প সংখ্যক ঈমানদার ও মুত্তাকী লােকদের ঔরসে মানব বংশ নতুনভাবে শুরু হলেও তারা পুনরায় শিরকে লিপ্ত হয়। মানুষকে এই ভ্রষ্টতা থেকে ফিরাতে যুগে যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে বহু নবী ও রাসূল প্রেরিত হন। যেসব মানুষ নবীগণের যথার্থ অনুসারী হয়েছেন, তারাই ছিলেন স্ব স্ব যুগে নাজী ফিরক্বা। পৃথিবীতে চারজন কিতাবধারী শ্রেষ্ঠ রাসূলের মধ্যে মূসা ও ঈসা (আঃ)-এর অনুসারী হ’ল ইহূদী ও নাছারাগণ। সংখ্যার বিচারে ও নিকটতম উম্মত হিসাবে তাদের অধঃপতনকে দৃষ্টান্ত হিসাবে হাদীছে বর্ণনা করা হয়েছে। ইহূদীরা ৭১ ফের্কা, নাছারারা ৭২ ফের্কা ও সবশেষ উম্মত মুসলমানেরা ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে শুরুতেই জান্নাতী হবে যে দলটি, তাদেরকেই বলা হয় ফিরক্বা নাজিয়াহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল। প্রত্যেক মুমিন এই দলভুক্ত হবার আকাংখা পােষণ করে এবং প্রত্যেকে নিজেকে এই দলভুক্ত বলে দাবী করে। ৭৩ ফের্কার সবাই মুসলিম। কিন্তু আমরা কেবল ‘মুসলিম’ হতে চাই না, বরং নাজী ফের্কাভুক্ত হতে চাই। সেই ফের্কাভুক্ত হ’তে গেলে তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পর্কে সম্যক অবগত হওয়া অবশ্যই যরূরী। অত্র বইটি আমাদেরকে সেদিকেই পথ দেখাবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।