ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক হইতে আমাদের জীবন ও কার্যকলাপের উপর ইউরােপীয় জীবনধারা ও সভ্যতার ধাক্কা লাগিতে আরম্ভ হয় ও পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যে এই প্রভাব একটা বন্যার মত হইয়া দাঁড়ায়। ইহার ফলে যে নব্য বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টি হয়, সম্পূর্ণ নূতন ধরনের ধর্মানুভূতি ও ধর্মান্দোলন দেখা দেয়, সমাজসংস্কারের প্রচেষ্টা চলিতে থাকে, অবশেষে জাতীয়তাবােধ জাগে ও স্বাধীনতার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের উদ্ভব হয়, তাহা সকলেরই জানা আছে। ইংরেজী ভাষার মারফতে পাশ্চাত্ত্য চিন্তা বাংলাদেশে না আসিলে এ-সবের প্রবর্তন যে হইত না, উহাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু পাশ্চাত্ত্য জীবনধারা, চিন্তা ও ভাব আমাদের মানসিক জীবন ও অনুভূতিতে কি নূতনত্ব আনিয়াছিল তাহার আলােচনা হয় নাই বলিলেই চলে। অথচ ইউরােপীয় সভ্যতার সংস্পর্শে আসিবার পর বাঙালীর মন যে আর আগেকার বাঙালী মন থাকে নাই তাহা পরবর্তী যুগের কার্যকলাপের যে-কোনও একটার বিশ্লেষণ করিলেই ধরা পড়িবে, দেখা যাইবে যে এই কার্যকলাপের পিছনে যেসব ধ্যান-ধারণা বা ঝোঁক ছিল তাহার প্রায় সবটুকুই বিদেশী, শুধু দেশী ছাঁচে নূতন করিয়া ঢালা। এই মানসিক পরিবর্তনের প্রধান সাক্ষী ভাষা। তাহা হওয়াই স্বাভাবিক, কেননা ভাষাই মানসিক জীবনের আধার ও অবলম্বন-ভাষায় ব্যক্ত না হওয়া পর্যন্ত মানসিক জীবনের ক্রিয়া ও অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ হয় না, এমন কি মনের যে অস্তিত্ব আছে। তাহারও উপলব্ধি হয় না। সেজন্য মানসিক জীবনের প্রসার ও শক্তি যত বেশী হয়, ভাষারও তত উন্নতি হইতে থাকে।
Nirodchandra Chowdhury (জন্ম: ২৩ নভেম্বর, ১৮৯৭ - মৃত্যু: ১ আগস্ট, ১৯৯৯) একজন খ্যাতনামা দীর্ঘজীবী বাঙালি মননশীল লেখক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। স্কলার এক্সট্রাঅর্ডিনারী শীর্ষক ম্যাক্স মুলারের জীবনী লিখে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে নীরদচন্দ্র চৌধুরী ভারত সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা হিসেবে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তীর্যক প্রকাশভঙ্গীর জন্য বিশেষভাবে আলোচিত ছিলেন।