প্রথম পর্ব বৈষ্ণব ধর্ম : তত্ত্ব ও দর্শন বৈষ্ণব পদাবলী বৈস্নব তত্ত্বেরই রসভাষ্য। ভারতীয় ধর্ম-দর্শনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অখণ্ড ভারতীয় সংস্কৃতি। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই তিন দেবতাকে অবলম্বন করে আমাদের ধর্ম-সাধনা আবর্তিত হয়েছে এবং এই ত্রয়ী দেবতা তাদের অধিকার অনুসারে যথাক্রমে সৃষ্টি, রক্ষা বা পালন ও ধ্বংসের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছেন। এই ত্রয়ী দেবতাকে অবলম্বন করে তিনটি পৃথক ধর্মসাধনাক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। যেমন—ি —বিয়ুকেন্দ্রিক ধর্ম বৈষ্ণবধর্ম, শিবকেন্দ্রিক ধর্ম শৈবধর্ম; অনুরূপে শক্তিদেবতাকেন্দ্রিক ধর্ম হল শাক্তধর্ম। বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত এই তিনটি ধর্ম আমাদের মূল সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। ভগবান বিষ্ণুকে যারা উপাসনা করেন তারাই বৈয়ব। অর্থাৎ ‘বিষ্ণু’ শব্দের সঙ্গে ‘অন্’ প্রত্যয় যোগ করেই ‘বৈঘ্নব’ শব্দটি এসেছে। ‘ছান্দগ্য উপনিষদ’-এ ‘দেবকীপুত্র’রূপে কৃষ্ণের নামোল্লেখ আছে। ‘তৈত্তিরীয় আরণ্যক’-এ বিষুর অন্যতম নাম হিসাবে বাসুদেবের উল্লেখ আছে। ‘শতপথ ব্রাহ্মণ’-এ বিষ্ণু ও নারায়ণ এক নন। কিন্তু মহাভারতের শান্তি পর্বে নারায়ণ, বাসুদেব ও কৃষ্ণ—তিনজনের কথা জানা যায় এবং সেখানে কৃষ্ণের ভিন্ন সত্তারূপে নারায়ণ ও বাসুদেবের নাম জানা যায়। গীতায় যে আদেশ শ্রীভগবান অর্জুনকে দিয়েছিলেন সেখানে কৃষ্ণ, বিষ্ণু ও নারায়ণ তাঁদের অবতারলীলার কর্মানুসারে এক। খ্রিস্টজন্মের বহু পূর্ব থেকেই কৃষ্ণ আমাদের পূর্বপুরুষের মনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এই শ্রীকৃষ্ণের দুটি রূপ আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত—একদিকে তিনি বংশীধারী অর্থাৎ লীলাময় শ্রীকৃষ্ণ এবং অন্যদিকে তিনি শত্রুবিজয়ী অর্থাৎ অস্ত্রধারী সংহারক শ্রীকৃষ্ণ।