এই বইয়ের লেখাগুলোতে গণতন্ত্রের বিষয়টিই হচ্ছে কেন্দ্রীয় বিবেচনা। গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে শক্তি ও প্রতিবন্ধক দুটো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। তাত্ত্বিক বিষয় আছে, কিন্তু জোর পড়েছে অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের ওপরই। রচনাগুলো ১৯৮৮ থেকে ২০০০ সালের ভেতর লেখা। সবচেয়ে দীর্ঘ যেটি সেটা লেখা হয়েছিল ২০০০ সলে, ‘কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা’ হিসেবে। এই সুযোগে কর্নেল তাহের সংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই ওই বক্তৃতা দিতে আহ্বান জানানোর জন্য। লেখাগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিল, এখানে তাদের একত্র করা গেল তাদের ভেতরকার ঐক্যের কারণে এবং সূত্র ধরে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে; গণতন্ত্রের পক্ষে সেটি একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ। প্রয়োজন ছিল আরো এগিয়ে যাওয়ার; যে-কাজটি জাতীয়তাবাদীদের পথে করা সম্ভব নয়, তাঁরা সেটা করেন নি দেখে তাই আক্ষেপ করা নিষ্প্রয়োজন। কাজটা করবার দায়িত্ব ছিল সমাজতন্ত্রীদের, সেটা তাঁরা করতে পারেন নি বলেই যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় নি। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান; সে আন্দোলন সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা না করার কারণ দু’টি। প্রথমত, ওই আলোচনার জন্য এখানে স্থান সংকুলান করা কঠিন হতো। দ্বিতীয়ত, জাতীয়তাবাদের বিষয়ে অন্যত্র আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এ নিয়ে বাঙালির জাতীয়তাবাদ নামে আমার একটি বই আছে; জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি নামে আরেকটি বই যেটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘গণতন্ত্রের সন্ধানে’ বইটি প্রকাশের জন্য কথাশিল্পী হরিপদ দত্তের তাগিদ খুবই কাজ করেছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।