সোফির জগৎ বইটির ফ্ল্যাপে লেখা কথাঃ সোফি অ্যামুন্ডসেন। চৌদ্দ বছর বয়েসী এই নরওয়েজিয় কিশোরী একদিন বাসার ডাকবাক্সে উঁকি মেরে দেখতে পায় সেখানে কে যেন অবাক করা দুটো চিঠি রেখে গেছে। চিঠি দুটোতে শুধু দুটো প্রশ্ন লেখা : ‘তুমি কে?’ আর ‘পৃথিবীটা কোথা থেকে এলো?’ অ্যালবার্টো নক্স নামের এক রহস্যময় দার্শনিকের লেখা আশ্চর্য চিরকুট দুটোর সেই কৌতূহল উস্কে দেয়া প্রশ্ন দু’খানি-ই সূত্রপাত ঘটিয়ে দিল প্রাক-সক্রেটিস যুগ থেকে সার্ত্রে পর্যন্ত পাশ্চাত্য দর্শনের রাজ্যে এক অসাধারণ অভিযাত্রার। পর পর বেশ কিছু অসাধারণ চিঠিতে আর তারপর সশরীরে, পোষা কুকুর হার্মেসকে সঙ্গে নিয়ে, অ্যালবার্টো নক্স সোফির কৌতূহলী মনের সামনে দিনের পর দিন একের পর এক তুলে ধরলেন সেই সব মৌলিক প্রশ্ন যার জবাব বিভিন্ন দার্শনিক আর চিন্তাশীল মানুষ খুঁজে ফিরছেন সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে। কিন্তু সোফি যখন এই চোখ ধাঁধানো আর উত্তেজনায় ভরা আশ্চর্য জগতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই সে আর অ্যালবার্টো নক্স এমন এক ষড়যন্ত্রের জালে নিজেদের বাঁধা পড়তে দেখল যে খোদ সেটাকেই এক যারপরনাই হতবুদ্ধিকর দর্শনগত প্রহেলিকা ছাড়া অন্য কিছু বলা সাজে না। উপন্যাসের ছলে সোফির জগৎ প্রকৃতপক্ষে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছে পাশ্চাত্য দর্শনের একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রাঞ্জল ইতিহাস। তবে এখানে সোফি যেহেতু তার দর্শন শিক্ষককে নানান প্রশ্ন করছে , নিজের মেধা ও বুদ্ধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আরসেই সঙ্গে পাঠককেও উদ্বুদ্ধ করছে সেই চিন্তা ভাবনার খেলায় শামিল হতে , তাই বইটি শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছে অত্যন্ত চিত্তার্ষক এবং ভাবনাসঞ্চারী। দর্শন সম্পর্কে ভীতিমূলক ধারণা অমূলক প্রমাণে সোফির জগৎ যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে সে আশা হয়ত করা যেতে পারে। নরওয়েজিয় ভাষায় লেখা মূল বইটির এই বঙ্গানুবাদটি করা হয়েছে, লেখকের অনুমতিক্রমে, পঅলেট মোলারকৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে। লেখক : ইয়েস্তান গার্ডর এর জন্ম ৮ আগস্ট ১৯৫২ সালে। নরওয়ের বার্গেন শহরে দর্শন পড়িয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন। এখন সর্বক্ষণের লেখক; নিবাস অসলো, স্ত্রী এবং দুই পুত্র সহ। ১৯৯৮ সালে সোফির জগৎ কে অত্যন্ত সফলভাবে একটি মিউজিক্যালে রূপ দেয়া হয় এবং জার্মানীতে সেটারপ্রথম পার্ফর্মেন্সের সময় বিক্রি হয় বইটির লক্ষ লক্ষ কপি।
এ পর্যন্ত ইয়স্তেন গার্ডার যে কয়টি গ্রন্থ রচনা করেছেন তার সব কটিই ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ হয়েছে আটটি। অনুবাদক : জি এইচ হাবীব (গোলাম হোসেন হাবীব) এর জন্ম ১৯৬৭ সালে ঢাকায়। মিরপুরের শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা মেসে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। তারপর বছর দুয়েক সাংবাদিকতা করে যোগ দেন অধ্যাপনায়।
দ্য গড অব স্মল থিংস’ ফ্ল্যাপে লেখা কথাঃ বাস্তবতার নিরীখে, সত্যি বলতে কি ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল সোফি মলের এইমেনেমে আসার পরপরই। হয়তো এটাও সত্যি, যে কোনদিনই সবকিছু বদলে যেতে পারে। আসলে কয়েক ডজন ঘন্টার প্রতিক্রিয়াই চলে সারা জীবন। আর ঐ কয়েক ঘন্টায় যা ঘটে, যেমন অগ্নিদগ্ধ হতে পারে কোনো বাড়ি, তার বেঁচে যাওয়া জিনিসপত্র- ভাঙা ঘড়ি, সই করা একটা ছবি, আধাপোড়া আসবাবপত্র- ধ্বংসস্তূপ থেকে অবশ্যই খুঁটে-খুঁটে তোলা হয়, আর বেছে নেয়া হয়, সংরক্ষণ করা হয়, হিসাব করা হয়। ছোট ছোট ঘটনা, সাধারণ জিনিস, বিনষ্ট হয় আর তারপর আবার গড়ে তোলা হয়। তখন অন্যরকম অর্থবহ হয়ে উঠে সব। হঠাৎ করেই ওসব জিনিস হয়ে যায় কোনো কাহিনীর আনকোরা উপজীব্য, শ্বেত শুভ্র অস্থি কাঠামো ... তার পরে এটা বলতেই হবে যে, সোফি মল এইমেনেমে আসার পরই সব ঘটেছিলো, এভাবেই দেখতে হবে ... । যুক্তিতর্ক উঠতে পারে এসব শুরু হয়েছিলো হাজার হাজার বছর আগে। মার্কসবাদীরা আসার অনেক আগে। ব্রিটিশরা মালাবারে পদার্পণের আগে, ডাচরা আসার আগে, ভাস্কো দা গামা আসার আগে, জ্যামোরিনরা কালিকট দখলের আগে, খৃষ্ট-ধর্ম নৌকায় চেপে কেরালায় আসার আগে, টি ব্যাগ থেকে চা ছড়িয়ে পড়ার মতো। আসলে এসব শুরু হয়েছিলো যখন ভালোবাসার নিয়মগুলো তৈরি হয়েছিলো, আর কেমন করে, কতটুকু? - এই প্রশ্নগুলো যখন উঠেছিল। যাই হোক বাস্তবতার বিচারে এক আশাহীন বাস্তব পৃথিবীতে ... ওটা ছিলো একটা আকাশীনীল দিন ডিসেম্বর উনসত্তরের (উনিশটা উহ্য)। একটা আকাশীনীল প্লেমাউথ, লেজের পাখনায় সূর্যরশ্মির ঝিলিক তুলে কচি ধানের ক্ষেত আর প্রাচীন রাবার বাগান পেরিয়ে ছুটে চলেছিলো কোচিনের দিকে ....