ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা রমণীয় নয় সংকলিত প্রবন্ধের বই। জাতীয় সামাজিক-পারিবারিক-রাষ্ট্রীয়-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া অন্যায়, অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ, ন্যায়বিচারের দাবি সংকলিত প্রবন্ধগুলোর বিষয়। মানুষ হয়েও সামাজিকীকরণের অভিঘাতে নারীবাচক নিগ্রহে জর্জরিত নারীসমাজের সকল অমর্যাদা, অবমূল্যায় ও দুর্ভোগের জন্য দেশ-জাতি-রাষ্ট্র-সমাজ ও পরিবার একদিকে যেমন দায়ী তেমনি অন্যদিকে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ। নারী সমাজের প্রতি নিগ্রহ, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচার ঘটতে থাকলে দেশ-সমাজ-পরিবারের প্রগতি ও উন্নয়ন ঘটতে পারে না। এই লক্ষ্যে জনমত গঠনের জন্য নারী প্রেক্ষিতের পটভূমিকায় লেখার তাৎক্ষণিক আবেদন হয়ে উঠেছে সর্বকালীন ও সার্বজনীন। সকল বিত্তের ও শ্রেণীর নারীর মাতৃত্ব, গার্হস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বনির্ভরতা, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সমঅধিকার, সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে অন্যান্য আইনের অসঙ্গতি, পারিবারিক আইনের বৈষম্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নারীর সমতা বিরোধ আচরণ, ফতোয়া, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে লিখেছেন বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের নেত্রী মালেকা বেগম। এই বই ভিন্ন চিন্তা বা মতের সমাজ-গবেষক ও নারীর মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদেরও ভিন্নমত চর্চার সুযোগ করে দেবে।
(জন্ম-১৯৪৪) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নারী নেত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স্ (১৯৬৫), এমএ(১৯৬৬)এবং সমাজ বিজ্ঞানে এমএ (১৯৬৮)ডিগ্রী অর্জ্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল ১ম পর্ব্ (১৯৯৩) শেষে ‘যৌতুক: বাংলা সাহিত্যে ও সমাজে প্রতিফলন বিষয়ে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ্ রচনা করেন। ১৯৬০-এর দশকের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী, ডাকসু’র নির্বাচিত সদস্য এবং রোকেয়া হলের ভিপি’র দায়িত্ব পালন শেষে (১৯৬৮)মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নারী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ ও ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পূর্ব্ পাকিস্তান মহিলা পরিষদ’- এর সাধারণ সম্পাদিকা ছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। নারী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেইজিং বিশ্ব নারী সম্মেলনের (১৯৯৫) আগে ও পরে আজ পর্যন্ত নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। পেশাগতভাবে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ’ বিভাগের খণ্ডকালীন নিয়মিত শিক্ষক্ এবং ‘সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যা্পক হিসেবে কর্ম্রত। ৬০’এর দশকে থেকে লিখছেন অব্যাহতভাবে বইয়ের সংখ্যা ৩০। বেতার ও টিভিতে নিয়মিত আলোচক। ‘আমি নারী’ চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখক। সুফিয়া কামালের দুটি গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে।