• Look inside image 1
  • Look inside image 2
  • Look inside image 3
  • Look inside image 4
  • Look inside image 5
  • Look inside image 6
  • Look inside image 7
  • Look inside image 8
  • Look inside image 9
  • Look inside image 10
বিহঙ্গপ্রবণ image

বিহঙ্গপ্রবণ (হার্ডকভার)

by কাজী জহিরুল ইসলাম

TK. 525 Total: TK. 452

(You Saved TK. 73)

14

বিহঙ্গপ্রবণ

বিহঙ্গপ্রবণ (হার্ডকভার)

TK. 525 TK. 452 You Save TK. 73 (14%)
বিহঙ্গপ্রবণ eBook image

Get eBook Version

US $2.42

in-stock icon In Stock (only 3 copies left)

* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন

Book Length

book-length-icon

239 Pages

Edition

editon-icon

1st Published

Publication

publication-icon
কারুবাক

ISBN

isbn-icon

9789849301363

কমিয়ে দেখুন
tag_icon

১৮-১৯ নভেম্বর রকমারি ফানডে, ৩৯৯৳+ অর্ডারে নিশ্চিত নোটবুক

book-icon

Cash On Delivery

mponey-icon

7 Days Happy Return

Funday 18-19 Nov image

Frequently Bought Together

plus icon plus icon equal icon
Total Amount: TK. 881

Save TK. 144

Similar Category eBooks

Customers Also Bought

Product Specification & Summary

ভূমিকা
কায়রো ট্রাইলোজি আমাকে কিছুটা অনুপ্রাণিত করেছে। বিহঙ্গপ্রবণ আমার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড। ২০০৭ সালে প্রথম প্রকাশ করে একুশে প্রকাশন। তখন ২২ টি অধ্যায় ছিল। এবার আরো ১০টি অধ্যায় যোগ করা হয়েছে। এটি বর্ধিত সংস্করণ। প্রথম সংস্করণে প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা নাম দিয়েছিলাম, এবার তা করলাম না। সংখ্যানুক্রম পাঠের ধারাবাহিকতার গতি নিশ্চিত করবে বলে আমার ছোটো ভাই বিটন জানিয়েছে, ওর কথা রাখলাম। এই গ্রন্থের সবই অকাট সত্য নয়। যেহেতু স্মৃতি থেকে লিখেছি, যেখানে যেখানে বিস্মৃত হয়েছি কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাই আমি যতটা না আত্মজীবনী বলি তার চেয়ে অধিক বলি আত্মজীবনী নির্ভর উপন্যাস। এই গ্রন্থে ষাট এবং সত্তরের দশকের উপমহাদেশ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ঘটনাবলি এসেছে, স্বধীনতা উত্তর বাংলাদেশে কীভাবে ধীরে ধীরে একটি মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে উঠলো সেইসব গল্প এসেছে। আশা করি গ্রন্থটি আপনাদের ভালো লাগবে। কোনোকালে কেউ যদি আমাকে জানতে চান, আমাকে নিয়ে কোনো উত্তরপ্রজন্ম গবেষণা করতে চান, তাঁর বা তাদের কাজকে এই গ্রন্থ কিছুটা সহজ করবে, এটি রচনার পেছনে এই উদ্দেশ্যটিও কাজ করেছে।
হঠাৎ দমকা হাওয়া এলো। হাইকোর্টসংলগ্ন ফুটপাথ ধরে হাঁটছি। ফুটপাথে বিছিয়ে থাকা ঝরাপাতাগুলো উড়তে শুরু করে। অদ্ভুত এক শব্দ ওঠে, মর্মর ধ্বনি। এই শব্দটি যতটা না আনন্দের, কোনো এক বিচিত্র উপায়ে, আমার কাছে ততটাই বিষণœপ্রবণ। এই শব্দ আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যায়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমার মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা ভর করে। কেউ একজন রাস্তা পার হয়ে এগিয়ে এলো, নারী। এসেই আমার হাত ধরে।
কোথায় যাচ্ছো?
আমি এ প্রশ্নের উত্তর জানি না। আমরা আসলে কোথায় যাই, কোত্থেকে আসি? কে এই নারী, আমার যাত্রাপথের বৃত্তান্ত জানতে চায়?
চলো আমার সাথে।
আমি উল্টোদিকে হাঁটি।
আমি হাঁটতে থাকি। এখন বিকেল। গাছের ছায়ারা লম্বা হতে থাকে। পাখিদের ছায়া পড়ে রমনার নিস্তরঙ্গ লেকে। লেকের কালো জল আরো কালো হয়। একটি বাওকুড়ানী ওঠে। আকাশে ঝরাপাতারা, ছেঁড়া কাগজেরা ঘুরতে থাকে। এরপর সন্ধ্যা হয়। আকাশে চাঁদ ওঠে। চাঁদের আলোয় পথ দেখা যায়, বহু দূরের মেঠো পথ। ঝাঁকড়া চুল মাথায়, আগুনের মতো লাল শার্টকে চাঁদের আলোয় কালো দেখাচ্ছে। মানিকনগর ঘাটে যখন নামেন ভদ্রলোক তখন বিকেলের সূর্য মেঘনার বুকে প্রলম্বিত চুমু খায়। তিনি ঢোকেন নিমাইয়ের মিষ্টির দোকানে। একটি হলুদ টিনের পিরিচে দুটো সাদা রসগোল্লা আর বাকরখানি বাড়িয়ে দেয় নিমাই। অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস উপুড় করে পানি খান তিনি, মুখে স্মিত হাসি।
জামাই কোম্বালা আইছেনও।
চমকে তাকায় ভদ্রলোক।
রুশন ভাইসাব না, আছেন কেমুন? আছি ভালাঅই, খবর হুনছেন নিচ্ছয়? পুত অইছে। মাশাআল্লাহ, আফনে রাজকফাইল্লা। সোফিয়া বালাঅই আছে। যান, পাও চালায়া যান গা। দিরুং কৈরেন না।
আপনে যান কই এই অবেলায়? যায়আম বাওনবাইড়া। মামলার তারিখ আছে। আমরার আবার বেলা-অবেলা আছে নিও? আফনে পাও চালাইয়া যান গা জামাই। রাইত করন ঠিক ঐতো না।
তিনি পা বাড়ান খাগাতুয়া গ্রামের দিকে। প্রথম সন্তানের পিতা হওয়ার আনন্দ তার চোখে-মুখে। সারা পথ মনে মনে ভাবেন, কি নাম রাখবেন ছেলের? তরুণ ব্যবসায়ী কাজী মঙ্গল মিয়া। সেই শৈশবে তিন ভাই-বোনকে একলা রেখে পিতামাতা চলে গেলেন। দাদীর কাছে মানুষ। যখন চোখ তুলে এদিক-সেদিক তাকানো শেখা, তখনি উড়াল। শূন্য খাঁচা বুকে চেপে একলা কাঁদে বৃদ্ধা দাদী। দৌলতপুর গ্রামের বাতাসে সেই কান্না বিলাপের ধ্বনি হয়ে ঝরে পড়ে।
শিশু বয়স থেকেই জীবনের সাথে এক ভয়ংকর মল্লযুদ্ধের শুরু। আজো যুদ্ধ চলছে। জীবনকে সুন্দর করার জন্য, জীবনকে উপভোগ্য করার জন্য টাকা দরকার, অনেক টাকা, জীবন-যুদ্ধের প্রতি বাঁকে এই শিক্ষার অমিয় বাণীই ছড়ানো ছিল। ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ততদিনে জেনে যান এ দেশের সবচেয়ে ধনী মানুষের নাম, জহুরুল ইসলাম। মাত্র ২৬ বছর বয়সে ব্যবসা করতে এসে এখন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঠিকাদার। দেশের সবচেয়ে বড় ধনী। চোখে মুখে আনন্দের দ্যুতি, স্বপ্নের ফেনা, চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত। পেয়ে গেছি, ছেলের নাম জহুরুল ইসলাম। আমার ছেলেও একদিন তার মতো বড় ব্যবসায়ী হবে, সেরা ব্যবসায়ী, অনেক ধনী। আমার জীবনে যদি স্বপ্ন পূরণ না-ও হয়, ছেলের জীবনে হবে। শ্যামগ্রাম পেরিয়ে তিনি পা রাখেন দীর্ঘশাইর-এর চকে। চাঁদের আলোয় অনেক দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে খাগাতুয়া গ্রামের দরোজা, এক সুবিশাল বটবৃক্ষ। এই বটগাছটিই খাগাতুয়া গ্রামের সীমান্তবৃক্ষ, অতন্দ্র প্রহরী। আজ আনন্দের রাতে ও যেন দ্বার উন্মুক্ত করে ওর ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে খলবল করে হাসছে। কলুই-মটর তোলা হয়ে গেছে অনেক আগেই। কোনো অলস চাষি হয়তো এতদিন পরে মটরক্ষেতের নাড়া পোড়াচ্ছে। দূর থেকে আগুনের জিভ দেখা যাচ্ছে, বাতাসে নাড়া পোড়ার গন্ধ ভেসে আসছে। শীত চলে গেছে। শেষ ফাল্গুন। তবুও হালকা কুয়াশা পড়েছে। অদ্ভূত প্রকৃতি। সকালে বৃষ্টি হলো এখন ফকফকা আকাশ। বৃষ্টি ধোঁয়া শিশিরভেজা পূর্ণিমা চাঁদটাকে স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা বড় লাগছে আজ। যেন ও খাগাতুয়া গ্রামের বাঁশঝাড়গুলোর মাথার ওপর নেমে এসেছে। শিভিরভেজা নরোম চাঁদের দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবেন, এ ছেলে নিশ্চয়ই একদিন অনেক বড় হবে। পিতার কল্পনায় স্বপ্নের প্রলম্বিত ছায়া।
জামাই আইছেগো, জামাই আইছে। উৎসবের বাড়িতে জ্যোৎস্নারাতে চাতালে খেলছিল যেসব কিশোরী, সমবেত হর্ষধ্বনি তোলে। কেউ কেউ, যারা কিছুটা বড়, আনাড়ি হাতে পরা শাড়ির আঁচল গুটিয়ে চাতালের খানাখন্দগুলো লম্বা লম্বা একেকটা লাফে পেরিয়ে সোজা অন্দরবাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। অন্দরমহলে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। রুস্তম কাজীর পেছন পেছন তার দুই কিশোর পুত্র হুশেন ও শহীদ এগিয়ে এসে দুলাভাইয়ের হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নেয়। এই হলো আমার জন্মদিনের বৃত্তান্ত। ১৯৬৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার একটি বিখ্যাত গ্রাম, খাগাতুয়া। প্রথম সন্তান বঙ্গীয় স্ত্রীলোকেরা পিতৃালয়ে প্রসব করে থাকে। এটাই প্রথা। সেই প্রথাগত কারণেই আমারও জন্ম হয় মাতুলালয়ে। বড় খালা আব্বা আসার খবর পেয়ে প্রসূতির ঘর থেকে উঠে আসেন।
বাদলের বাপ আসছেন? আব্বা অবাক হন খালার মুখে নবজাতকের নাম শুনে। এমন বাদল দিনে যে শিশুর জন্ম তার নাম বাদল রাখবো নাতো কি রাখবো?
আব্বা বলেন, আপা, আমি যে অন্য একটি নাম ঠিক করে রেখেছিলাম। কি নাম? জহুরুল ইসলাম। বেশ তো। ওর ভালো নাম হবে কাজী জহিরুল ইসলাম। শুধু খাতাপত্রে। আর আমরা ডাকবো বাদল বলে। হঠাৎ পেছনে তাকিয়েই বলেন, এই হুশেন, তর দুলাভাইরে অজুর পানি দে। গরম পানি দিবি। তারপর আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে বড়খালা বলেন, ঠিক আফনের মতোন হৈছে। রাজপুত্তুর। যান অজু কৈরা আসেন। ছেলের মুখ দেখবেন।
ষাটের দশকের শেষদিকটায় রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা দানা বাঁধে। এই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে ওলাওঠা রোগের প্রদুর্ভাবও দেখা দেয়। গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছিল। মূলত এটা শুরু হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। আমার নানা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন আমার জন্য, আম্মার জন্য। তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে আম্মা ছিলেন দ্বিতীয় কন্যা, প্রথম কন্যা রফিয়া বেগমের এখনো সন্তান হয়নি। তিন মামার সবাই কিশোর। কাজেই আমিই নতুন প্রজন্মের প্রথম প্রদীপ। আমাকে নিয়ে উল্লাস ও দুশ্চিন্তা দুই-ই বেশি।
ষাটের দশকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে উপমহাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ আর বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিনিদের ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এই দুটি যুুদ্ধেই প্রচুর লোক মারা যায়। সভ্যতার উজ্জ্বল ইতিহাসে দুটি কালির আঁচড়। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পুরো ষাটের দশক জুড়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিনিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ওপরই মিডিয়ার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৬০ সালের মে মাসে মার্কিন বিমানবাহিনীর ফ্রান্সিস গ্যারি পাওয়ার ইউ-২ স্পাই প্লেন নিয়ে ওড়ার সময় রাশিয়াতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভূ-পাতিত হয়। এই ঘটনা প্যারিস সম্মেলনকে ধূলিস্মাৎ করে দেয়। হিটলারের অন্যতম সহযোগী, অগণিত ইহুদি হন্তারক নাজিবাহিনীর শীর্ষনেতাদের একজন এডলফ আইখম্যান মোশাদ এবং শাবাকের নেতৃত্বাধীন একটি দলের হাতে ধরা পড়েন ১৯৬০ সালের ১১ই মে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ারসের এক শহরতলিতে। আইখম্যান তখন বুয়েনস আয়ারসের মার্সিডিজ বেঞ্জ কারখানায় একজন ফোরম্যানের কাজ করতেন। মোশাদ ও শাবাকের লোকেরা সারাদিন তার বাড়িতে ওঁৎ পেতে ছিল। আইখম্যানকে ধরা হয় বেশ নাটকীয়ভাবে।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তিনি বাস থেকে নামছেন কি-না সেটা নিশ্চিত করার জন্য একজন এজেন্ট সারাক্ষণ দৃষ্টি রাখছেন বাসগুলোর দিকে। দু’জন এজেন্ট ওর বাড়ির সামনের একটি ভাঙা গাড়িতে বসে খুটখাট করছিলেন। যেন তারা গাড়ি মেরামত করছেন। আইখম্যান বাস থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে নিজের বাড়ির কাছে এলে ভাঙা গাড়ির একজন, যার নাম জভি আহারোনি, ওর কাছে সিগারেট চান। আইখম্যান তাকে সিগারেট দেবার জন্য পকেটে হাত দিলে অন্যজন, পিটার মালভিন (পোলিশ... ইহুদি, কারাতে ব্ল্যাকবেল্ট) তাকে আচমকা আক্রমণ করেন এবং দু’জন মিলে তাকে গাড়িতে নিয়ে বসান। ঘাড়ের ওপর আঘাত করায় আইখম্যান সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। এরপর তাকে মোশাদের একটি গোপন ও নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে আইখম্যানকে রাখা হয় ১০ দিন। এর মধ্যে ওরা সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলে কিভাবে আর্জেন্টিনীয় সরকারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আইখম্যানকে নিয়ে যাওয়া হবে ইসরাইলে। ২ মে এল আল ব্রিস্টল ব্রিটানিয়া নামের একটি বাণিজ্যিক বিমানে করে বুয়েনস আয়ারস থেকে আইখম্যানকে জীবন্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ইসরাইলে। যদি কোনো করণে ব্রিস্টল ব্রিটানিয়া তাকে বহন করতে না চাইতো বা গোপনীয়তা প্রকাশ পেয়ে যেত তাহলে ব্যাক-আপ সাপোর্ট হিসেবে আরো একটি প্লেন তৈরি রাখা হয়েছিল। আর যদি আর্জেন্টিনার পুলিশ জেনে যেত, তাহলে একজন এজেন্ট নিজেকে আইখম্যান পরিচয় দিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিত এবং মূল আইখম্যান চলে যেত ইসরাইলে, এভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগুরিয়ন আইখম্যানকে ধরার ব্যাপারে ইসরাইলের সম্পৃক্তা অস্বীকার করেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আর্তুরো ফ্রোন্দিজির কাছে। তিনি বলেন একদল কট্টরপন্থি ইহুদি স্বেচ্ছাসেবক আইখম্যানকে ধরে এবং ইসরাইলে নিয়ে আসে। এটা যে একটা ডাঁহা মিথ্যা কথা তার প্রমাণ মেলে যখন দু’দিনের মধ্যেই (২৩ মে, ১৯৬০) প্রধানমন্ত্রী গুরিয়ন ইসরাইলি সংসদ কেèসেটে আইখম্যানের বন্দিত্বের কথা ঘোষণা করেন। ১৯৬১ সালের ১১ এপ্রিল জেরুজালেমের আদালতে কার্ল এডলফ আইখম্যানকে বিচারের জন্য হাজির করা হয়। তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় বুলেটপ্রুফ কাচের বাক্সের ভেতর। তিনি তখন একটি কালো কোর্ট পরা ছিলেন। ইসরাইলের এটর্নি জেনারেল গিডেওন হুসনার এই বিচারকার্যে প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে আনীত ১৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের উত্তরে আইখম্যান শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, ‘আমি হুকুম পালন করেছি মাত্র’। ১৪ আগস্ট (পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, তখন আমাদেরও) আইখম্যানের বিচারকার্য শেষ হয়। তিন বিচারক একমত হয়ে ১৫ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। আইখম্যান রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিলে তিনি বলেন, সেনাধর্ম অনুসারে তিনি ঊর্ধ্বতনের হুকুম পালন করেছেন মাত্র। তিনি নির্দোষ। ২৯ মে ১৯৬২ সালে ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট আইখম্যানের আপিল নাকচ করে দেন। সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হলো রাষ্ট্রপতি। আইখম্যানের হয়ে অসংখ্য মানুষ রাষ্ট্রপতি ইতজহাক বেন-জভি’র কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। প্রেসিডেন্ট বেন-জভি স্যামুয়েলের বই থেকে উদ্ধৃত করেন, ‘যেহেতু তোমার তরবারি নারীদের কাঁদিয়েছে, সুতরাং তোমার মা-ও কাঁদবে তাদেরই একজন হয়ে’।
১৯৬২ সালের ১ জুন রামলা কারাগারে আইখম্যানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আইখম্যানের মতো নাজি বাহিনীর আরো অনেকেই বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়েছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারা সকলেই একই কথা বলেছে, আমি হুকুম পালন করেছি মাত্র। মিলিটারি ব্যবস্থাপনায় এটাই হওয়া উচিত। তা না হলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। তারপরেও বলবো ইতিহাসের এই অংশ থেকে বোধ হয় আমাদের কিছু শেখা উচিত। মানবতা, মানবধর্ম সকল হুকুমের ঊর্ধ্বে, একথা না মানলে একদিন তার খেসারত দিতেই হয়। ১৯৬০ সালে আফ্রিকায় এক বিরাট পরিবর্তন আসে। সেনেগাল, ঘানা, নাইজেরিয়া, মাদাগাস্কার এবং জায়ার স্বাধীনতা লাভ করে। চায়না ধীরে ধীরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। গড়ে তুলতে শুরু করে নিজস্ব ধারার কম্যুনিজম। ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় চায়না-সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। অন্য কমিউনিস্ট ব্লকের দেশগুলো নড়ে-চড়ে বসে। দ্বিধাবিভক্তির সূক্ষ্ম এক রেখা উঁকি মারে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লকেই। ১৯৬১ সালে জন এফ কেনেডি আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন ২০ জানুয়ারি। এর আগে ৩ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই সময়ে আকাশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে শুরু হয় এক নতুন প্রতিযোগিতা। সোভিয়েত ইউনিয়ন পাঠায় ইউরি গ্যাগারিনকে আর আমেরিকা দুই দফায় মহাশূন্যে পাঠায় এলান বি শেফার্ড আর ভার্গিল গ্রিশমকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘেরমান স্তেপানোভিচ টিটভ সোভিয়েত স্পেসশিপ ভস্টক-২ নিয়ে ২৫ ঘণ্টায় সাড়ে ১৭ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসেন। তিনি অতিক্রম করেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬০ মাইল পথ। কে কার আগে আকাশের কতখানি জয় করবে এ নেশায় মত্ত বিজ্ঞানীরা। রাষ্ট্রনায়করা, যে আগে আকাশের যত উপরে উঠবে সে তত বড়, এই রকম মানসিকতার পরিচয় দিতে শুরু করেন। আসলে পুরো ব্যাপারটাই হলো পেশিশক্তি দেখানো। আকাশ জয় করা মানেই হলো, অর্থ এবং বুদ্ধিতে আমি বড়, প্রযুক্তিতে আমি বড়। অতএব, সাবধান।
-কাজী জহিরুল ইসলাম
-নিউ ইয়র্ক। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
Title বিহঙ্গপ্রবণ
Author
Publisher
ISBN 9789849301363
Edition 1st Published, 2017
Number of Pages 239
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)
loading

Similar Category Best Selling Books

prize book-reading point
Superstore
Up To 65% Off
Recently Viewed
cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from bookshelf?

Write a Review

বিহঙ্গপ্রবণ

কাজী জহিরুল ইসলাম

৳ 452 ৳525.0

Please rate this product