আদর করতে বাঁদর আদর দিয়ে ছেলেদের মাথা খাওয়া হয় তা জানি, কিন্তু তার পরিণামে মাথা খোয়া যাবার সাথে যে তাদের দেহেরও খোয়ার হয়ে থাকে তার উদাহরণ দেখেছিলাম সেদিন। শুধু বাঁদরামিই নয়, সত্যিকারের বাঁদর হয়ে যেতে দেখেছি একটা ছেলেকে— নিজের চোখের ওপর— তোমরা বিশ্বাস করো আর নাই করো। আমার মামা ছিলেন এক হোসটেলের সুপারিন্টেণ্ডেন্ট। তিনি হঠাৎ একবার এক শক্ত অসুখে পড়লে তাঁর একটিনি হয়ে অনেকদিন আমাকে সেই ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধান করতে হয়েছিল এককালে। তখন আমি সবে গল্প লেখা শুরু করেছি; যত লিখি ততই কাগজে কাগজে পাঠাই, কোনটাই তার ছাপা হয় না, অমনোনয়নের চিরকুট নিয়ে পত্রপাঠ ফেরত আসে। ততই আমার আরো রোখ চেপে যায়, লেখার ঝোঁক বেড়ে যায় ততই আরো। তাই হোসটেল সুপারের কাজটা আমার বেশ পছন্দসই হয়েছিল। খাও দাও আর আরামে গল্প লেখ দিনরাত। অবিশ্যি হোসটেলের ছেলেদেরও একটু দেখা-শোনা করতে হয় বইকি, কিন্তু সেটা নামমাত্রই। সুস্থ অবস্থায় তাদের দেখবার কিছু নেই, দৃশ্য হিসেবে তখন তারা উপাদেয়। কেবল কখনও কেউ অসুখে পড়লে তখন তাকে দেখতে হয়। স্থানীয় ডাক্তারের সঙ্গে পাকাপাকি ব্যবস্থা করা আছে, তিনিই এসে দ্যাখেন তখন। তিনি রোজই একবার করে হোসটেলে আসেন, দেখে যান। মানে, ছেলেদের কারো কিছু দেখাবার থাকলে তারা নিজেরাই এসে দেখা দেয়। নইলে স্বভাবতই তারা অদৃশ্য থাকে। আমি তো কদাচিৎই তাদের টিকি দেখতে পাই ।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১৩ ডিসেম্বর, ১৯০৩ ( বাংলা,১৩১০-এর ২৭ অগ্রহায়ণ)। প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক। কবিতা-রচনা দিয়ে সাহিত্য-জীবনের শুরু।প্রথম কবিতা বেরোয় ভারতী পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশিত বই দুটিও -- 'মানুস' ও 'চুম্বন' -- কবিতার। দুটিই প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। তারপর অজস্র লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ, নাটক এবং তুলনাহীন অজস্র হাসির গল্প। লিখেছেন ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা ও ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর নামের অনন্য স্মৃতিকথামূূলক দূটি বই। প্রবন্ধের বই : মস্কো বনাম পন্ডিচেরি ও ফানুস ফাটাই। নাটকের গ্রন্থ : যখন তারা কথা বলবে। বিচিত্র জীবন ছিল তার। রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন, রাস্তায় কাগজ ফেরি করেছেন, ফুটপাথে রাত্রিবাস করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, আজীবন মেস-জীবন যাপন করেছেন । করেন নি যা, তা হল বিয়ে।