আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে তুমুল ঘূর্ণিঝড় চলছে ইসলাম ধ্বংসের। আমাদের দীন ও আকিদা নির্মূলে চলছে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র। ইতিহাসের এমনই এক অভিশপ্ত দল খারেজি। ইসলামের আকিদা হতে প্রথম বিচ্যুত দলও এটি। তাদের ছিল স্বতন্ত্র চিন্তাধারা এবং বিশেষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি—যা যথারীতি একটি আকিদা হিসেবে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর দিকে দিকে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ছড়িয়ে রেখেছে। দলছুট এসব খারেজিদের নিন্দায় রাসুল সা. হতে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। তাদের অনিষ্টতার প্রতি ইঙ্গিতবাহী হাদিসের সংখ্যাও কম নয়। আলোচ্য গ্রন্থটি খারেজিদের বিষয়ে একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে রচিত। এতে খারেজি সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও ইতিহাস, তাদের সাথে আমিরুল মুমিনিন হজরত আলি ইবনে আবি তালিব রা.-এর আচরণ, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেপথ্য কারণ উঠে এসেছে। পাশাপাশি যুগে যুগে তাদের কুকীর্তি যেমন : ধর্মে বাড়াবাড়ি, দীন সম্পর্কে উদাসীনতা, তাকফিরের অযথা অপব্যবহার ইত্যাদি বিষয়েও বিবৃত হয়েছে প্রখ্যাত আরব স্কলার ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির কলমে। ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় তিনি পাঠকদের সামনে উন্মোচন করেছেন—যেখান থেকে আমরা পাব অসংখ্য শিক্ষার খোরাক।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০