"জীবন ও কর্ম: উমর ইবনুল খাত্তাব-২য় খণ্ড" বইয়ের পিছনের কভার: আমরা বর্তমানে এক বিশৃঙ্খল পৃথিবীতে বসবাস করছি। তবে তা উমর রা.-এর সমকালীন যুগের বিশৃঙ্খলতা থেকে বেশি নয়। উমর রা.-এর জীবন শুরু হয়েছিল। জাহেলিয়াতের যুগে এবং শেষ হয়েছিল ইসলামের স্বর্ণযুগে। শিক্ষা গ্রহণের জন্য ইসলামের দ্বিতীয় খলীফার জীবন-ইতিহাস এক অমূল্য সম্পদ। তিনি এমন সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন যেগুলাে এর আগে কাউকে মােকাবেলা করতে হয়নি। আর তিনি এসব চ্যালেঞ্জ ইসলামের সঠিক মূল্যবােধ এবং শরীয়তের সীমারেখায় থেকেই সফলভাবে মােকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। যারা এ সমস্যাসঙ্কল পরিবেশে জাতিকে নেতত্ব দিতে চান তাদের জন্য এ গ্রন্থটিতে একজন আদর্শ মুসলিম নেতার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে যিনি তার অধীনস্থ সৈন্য, মহিলা, শিশু, অমুসলিম জাতি-গােষ্ঠি এবং এমনকি পশু-পাখিসহ সকলের ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার ভয় করতেন। উমর রা. এমন একজন সফল ও দূরদর্শী নেতা ছিলেন যিনি রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন এবং যে কোনাে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে সমাজের বিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। অন্য সকলের জন্য এ গ্রন্থ ইসলামী ইতিহাসের এক চমকপ্রদ এবং তাৎপর্যপূর্ণ অংশকে জানার পথকে উন্মুক্ত করবে। একই সাথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেও তুলে ধরবে যে, প্রাচুর্য কিংবা অর্থ-বিত্তের মাধ্যমে আমাদের শক্তি ও সাহস অর্জিত হয় না, বরং সেটি আসে আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পণ এবং ইসলামের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০