"গোস্ট হাউজ" বইটির প্রথম অংশ থেকে নেয়াঃ সেপ্টেম্বর ১০, ১৭৯৭ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। নিভে গেছে আগুন, ধূসর ধোঁয়ার কুণ্ডলী সাপের মতাে পাক খেয়ে কেবল ওপরে উঠছে। পােড়া কাঠের ফাঁকে মাঝে মাঝে ঝিলিক দিচ্ছে ধিকিধিকি শিখা। উপসাগর থেকে আসা নােনা বাতাস এ আগুনটিকেও নিভিয়ে দেবে। অন্যায় এবং আতঙ্কের তাে বটেই, কিন্তু এরকম দৃশ্যের এতবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে যে দর্শকদের এসব আর তেমন প্রভাবিত করে না। ওরা আগেও দেখেছে মেয়েটি নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে আকুতি করছিল। লঘু উচ্চারণে মন্ত্র পড়তে ব্যস্ত প্রিস্ট ওদিকে নজরই দেননি। আর জল্লাদ- সে যখন মেয়েটির পায়ের নিচে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তখন তার মুখটাকে মনে হচ্ছিল একটা মুখােশ। ঘটনার সমাপ্তি ঘটলে মহিলারা তাদের বাচ্চাকাচ্চাদের একত্রিত করল, পুরুষরা রওনা হলাে কাজে ফেরার জন্য। শিগগির তারা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে গেল। তাদের দেখে বুঝবার উপায় নেই তরুণীর রক্ত পানের জন্য তারা কেমন উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল। তবে একজন রয়ে গেল বধ্যভূমিতে। ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা চিতার সামনে লম্বা ছায়া ফেলে সে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে ঢিলা জামা। পুড়ে কালাে হয়ে যাওয়া কঙ্কালের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল সে। খানিক আগেও যেটি ছিল নরম, গােলাপি হাত, এখন সেটি পােড়া হাড়; সেদিকে সে নিজের হাতখানা বাড়িয়ে দিল। শহরের কনস্টেবল লােকটির দিকে হেঁটে গেল। মট করে কিছু একটা ভেঙে যাওয়ার হালকা শব্দ কানে এল তার। লােকটার পেছনে এসে তার কাঁধে টোকা দিল। সিধে হলাে লােকটা। কনস্টেবল খেয়াল করল না হাত মুঠো করে রেখেছে লােকটা। এও লক্ষ করল না পুড়ে কংকাল হওয়া শরীরটা পুরােপুরি অক্ষত নেই। লােকটা তার মুঠোতে কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছে। সে নীল সােনালি রঙের একটি বস্ত্রখণ্ডে জিনিসটি পেঁচিয়ে নিয়ে বাড়ির পথ ধরল।
পাঠকনন্দিত অনুবাদক অনীশ দাস অপু ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত লক্ষ্মী কান্ত দাস। ১৯৯৫ সালে এই কৃতি লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস করেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি দেশের জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকাগুলোতে অনুবাদক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন, এবং ফিচার, গল্প ও উপন্যাস অনুবাদ করতে থাকেন। অনীশ দাস অপু এর বইগুলো সাধারণত থ্রিলার ও হরর ধাঁচেরই হয়ে থাকে। তবে ক্লাসিক ও সায়েন্স ফিকশনেও অনুবাদেও পিছিয়ে নেই তিনি। অনীশ দাস অপু এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ, আ স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর (সিডনি শেলডন), দ্য স্কাই ইজ ফলিং (সিডনি শেলডন), সিলেক্টেড মিস্ট্রি স্টোরিজ (আলফ্রেড হিচকক), শ্যাডো অফ দ্য ওয়্যারউলফ (গাই এন স্মিথ), ইলেভেন মিনিটস (পাওলো কোয়েলহো), প্রেত, শাঁখিনী, কিংবদন্তীর প্রেত, আয়নাপিশাচ, পিশাচবাড়ি ইত্যাদি। এ পর্যন্ত তাঁর অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক। অনীশ দাস অপু এর বই সমগ্র বাংলাদেশের থ্রিলার ও হরর পাঠকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশে পাশ্চাত্য ধারার হরর গল্প ও উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে তিনি যোগ করেছেন এক নতুন মাত্রা, পেয়েছেন তুমুল পাঠকপ্রিয়তা। নিজের মূল পেশা হিসেবে লেখালেখি বেছে নিলেও অনীশ দাস অপু যুক্ত আছেন সাংবাদিকতার সাথেও। ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন এই কৃতি অনুবাদক ও লেখক।