"জীবন ও কর্ম: আবু বকর আস-সিদ্দীক রাযি. (২য় খণ্ড)" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ইসলাম গ্রহণ করার দিন থেকে আমতা আবু বকর রা. জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্য সকল সাহাবী থেকে অগ্রগামী ছিলেন। রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ সৈনিক আর রাসূল সা.-এর মৃত্যুর পরও তিনি একইভাবে ইসলামের উপর দৃঢ় থাকেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহে মুসলিম জাতিকে একতাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন। তাকে অন্যান্য সাহাবীরা যেখানে উসামা রা.- এর সৈন্যদলকে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছিলেন, সেখানে তিনি সঠিক ও দ্ব্যর্থহীনভাবে রাসুল সা. এর ইচ্ছাকে অনুসরণ করে সেটা অব্যাহত রাখেন। যখন মুসলমানরা যাকাত দিতে অস্বীকার করল এবং যখন ভণ্ড নবীরা পুরাে মুসলিম জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাড়াল, আবু বকর রা. তখন খুবই কাটতার পরিচয় দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে চরম আক্রমণাত্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এরকম আরও অসংখ্য প্রাপ্তিতে সমৃদ্ধ ছিল আবু বকর রা.-এর জীবন। আমি সেগুলােকে পরিষ্কার এবং ক্রমানুসারে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। তবে আমার মূল চেষ্টা ছিল এটা বর্ণনা করা যে, একজন মুসলমান এবং শাসক হিসেবে আবু বকর রা. কতৃক গৃহীত নীতিসমূহ কিভাবে একটি শক্তিশালী, দৃঢ় এবং উন্নয়নশীল দেশ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে- যা মদীনা থেকে আরব উপত্যকা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে বিস্তার লাভ করে।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০