"প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল লেখক ঝংকার মাহবুব" এর বইটি কাদের জন্য? জ্বর-সর্দি-কাশি হলে ট্যাবলেট খুঁজো। ডাক্তারের কাছে ছুটো। অথচ লাইফে একটা পর একটা প্যারা এসে ফিউচার ত্যাড়া করে চলে যাচ্ছে। অন্যরা হাসি মুখে বাম্বু দিচ্ছে। একটু ঘাটতির জন্য লক্ষ্যগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এমন যাদের অবস্থা তাদের বাড়তি চাপ না নিয়ে সিচুয়েশনগুলো উতরে যাওয়ার জন্য এই বই। এই বইতে কী আছে? আমাদের লাইফের প্যারাগুলো হচ্ছে- ফিউচারে কী হবো সেটা বুঝতে না পারার প্যারা, নিজের চাইতেও কম কোয়ালিটির পোলাপান থেকে পিছিয়ে পরার প্যারা, অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে না পারার প্যারা। এমনকি আজীবন সিঙ্গেল থেকে যাওয়ার প্যারাও আছে। তা ছাড়া পড়া মনে না থাকা, পড়তে ইচ্ছে না করা, কিংবা পরীক্ষা চলে আসার টেনশন শুরু হলে তো প্যারা ভাইয়ারা ট্রাক ভাড়া করে নিজ দায়িত্বেই চলে আসে। আর এতো এতো প্যারার বস প্যারা হচ্ছে- সবই বুঝি, কীভাবে করতে হবে সেটাও জানি। তারপরেও শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে না পারার প্যারা। এই রকম প্রায় ২৫টা প্যারা নিরাময় করার ইফেক্টিভ টেকনিক নিয়েই এই বই- প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল। কেন এই বইটি পড়া দরকার? কারণ একটা সময় পরে আমাদের লাইফে স্যারদের ঝাড়ি, আম্মুর বেডঝাড়ুর বাড়ি, বাবার চোখ রাঙ্গানি থাকে না বলেই আমাদের কলেজ-ভার্সিটির লাইফগুলো হয়ে উঠে দড়ি ছাড়া গরু, রাস্তা ছাড়া গাড়ি, আর চিনি ছাড়া শরবতের মতো। সেই শরবতকে আরো তিক্ত করে ইয়াম্মি করলার জুস বানিয়ে ফেলে চারপাশের দুস্টু প্যারাগুলো। বইটি সম্পর্কে চমক হাসান যা বললেন আমাদের আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ জীবনের একটা পর্যায়ে এসে হতাশ হয়ে পড়ে। কী করা উচিত, কীভাবে করা উচিত সেটা নিয়ে তারা বিভ্রান্ত অবস্থায় থাকে। হতাশা থেকে জন্ম নেয় অনীহা, অনীহা থেকে থেকে ব্যর্থতা, আর ব্যর্থতা থেকে আবার হতাশা- এই ব্যর্থতার দুষ্ট চক্রে আবর্তিত মানুষগুলোর বৃত্তকে ভাঙার জন্য নিরলস চেষ্টা করে চলেছেন ঝংকার মাহবুব। তার প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল এমন আরেকটি প্রয়াস। পুরো বইটিতে যেন লেখক কথা তার খুব কাছের কোনো ছোট ভাই বা বোনকে। বইয়ে পাঠকের প্রতি সম্বোধনটাই বেশ চমকপ্রদ। ভাষা একেবারেই কথ্য ভাষায়। দারুণ সব টুলস রয়েছে বইটিতে- যেগুলো নিজেকে যাচাই করার জন্য দারুণ সহায়ক হবে। এটেনশন চুরি হয়ে যাচ্ছে কিনা সেই মিটার, সারাদিন কীভাবে কাটানো উচিত তার ঘণ্টাওয়ারি নকশা, জীবন , জীবনের যাচাইয়ে সূর্য আর মেঘের হিসাব, জীবনটা গঠনমূলক কাজে ব্যয় হচ্ছে নাকি হারিয়ে যাচ্ছে তার হিসেব- এগুলো পাঠকের সঙ্গে বইটিকে আরও গভীরভাবে যুক্ত করে। চমক হাসান গণিত প্রেমী ও R and D Engineer, Boston Scientific California, USA --- বইয়ের সূচি ভুল করে কেউ এভারেস্ট জয় করে না সময় ড্রেনে ফেললে, টার্গেট এচিভ হয় না লাইফ করলে অডিট, বাড়বে ক্রেডিট পুঁচকা টার্গেট দেবে, প্রেস্টিজিয়াস গিফট না থাকলে ফোকাস, কপাল হবে ফাটা বাঁশ এটেনশন হইলে ফাঁস, রেজাল্ট হবে জিন্দালাশ অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল, লাইফ ধ্বংস করার হস্তী ক্যালকুলেটেড মাস্তি, ফিউচারের স্বস্তি মাইক্রোশিফট করলে, লাইফ হয় না গুবলেট পড়া নিয়ে খেলা করে, নাকের ডগার হেলমেট ইফেক্টিভ লাইফস্টাইলকে, মন্ত্রী বলে যক্ষা পাশ দাও মা ভিক্ষা, তিনমাস পর পরীক্ষা অপরিচিতদের সাথে কথা না বলার ধানাই পানাই ইন্ট্রোভার্ট হয়েই, চামে কোপ মারে, রাম কানাই আম ছাড়া আচার, প্যাশন ছাড়া ফিউচার লিডার হলেই পয়দা হবে, চিকন পিনের চার্জার ভয়ের সাথে পাঙ্গা, ফিউচার হবে চাঙ্গা প্রেমে স্বৈরাচারি করে, পালিয়ে বাঁচে লাফাঙ্গা জেদ করে, খারাপ সময় ভেদ করার ফুডানি কমপ্লিট গাইডলাইন গিলে, দেখাও তোমার মাস্তানি মাইক্রো লেভেলে হেরে মোরা, মেগা লেভেলে বুঝি পড়া মনে না থাকলেও, ক্রাশের চিজটারে খুঁজি বেশি নম্বরের সিক্রেট ঠেকায়, ডান্ডি খাওয়ার ভোজ ইংরেজি শেখার মাইক্রোডোজে, অস্থির পোজ না হয়ে দিকভ্রান্ত, ৩ সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত কোথাও চান্স পাইনি, হাতে হারিকেন ছাড়িনি চাকরির মায়েরে বাপ, স্টুডেন্ট লাইফে স্টার্টআপ টাইম ম্যানেজমেন্টের সার্জারিতে, লাগবে না চেকআপ অল্প অল্প ডিপোজিট, মাস শেষে ভালো হ্যাবিট প্রোকাস্টিনেশনকে ফ্রাই করে, ডেস্টিনেশনের সার্কিট হায়ার স্টাডির ভিটামিন, পার্ট নেয়ার প্রোটিন ফিউজ লাইফে ভোল্টেজ লাগায়, মিস্টার মুড়ির টিন
পাঠকসমাজে তাঁর পরিচিতি এখন গৎবাঁধা লেখার বাইরে নতুনত্বের আমেজ এনে দেওয়া তরুণ লেখক হিসেবে। তিনি ঝংকার মাহবুব, পেশায় একজন ওয়েব ডেভেলপার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক পাশ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ঝংকার মাহবুব। বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের মধ্য থেকে ঝংকার মাহবুব এর বই আলাদা করা যায় খুব সহজেই। তাঁর লেখার বিষয়গুলোও ব্যতিক্রমধর্মী। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংকে কীভাবে এ দেশের তরুণদের মাঝে সহজবোধ্য করা যায়– তা নিয়েই ঝংকার মাহবুব এর বই সমূহ। তাঁর লেখা বইগুলোতে তিনি প্রোগ্রামিংয়ের মতো কাঠখোট্টা জিনিসকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঝংকার মাহবুবের বই সমগ্র এখন এ দেশের তরুণ প্রোগ্রামারদের কাছে প্রোগ্রামিং শেখার মজার বন্ধু হয়ে উঠছে এবং এই বইগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু বই হলো রিচার্জ ইয়োর ডাউন ব্যাটারি, হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং, প্রোগ্রামিংয়ের বলদ টু বস, প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী, প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল ইত্যাদি। প্রোগ্রামিং শেখানো সহজ করা বইগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলেও ঝংকার মাহবুব তাঁর লেখার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করেছেন তরুণ প্রোগ্রামারদেরকে। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি শিকাগোর নিলসেন কোম্পানিতে সিনিয়র ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন।