দোষে, এরূপ হইল যে আর পড়িতে ইচ্ছা হয় না। স্ত্রীলোকের সঙ্গে হাসি রহস্য তাস খেলিতে ইচ্ছা করে।"... স্বগৃহে দাসদাসীদের সংসর্গ ছাড়াও পদমদীর নবাব সাহেবের মজলিস মীর-মানসের এই পরিবর্তনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। নবাব সাহেবের বাড়িতে প্রতি রাতে মজলিস জমে উঠত "অতি গুপ্ত স্থানে বসিয়া আমোদ-আহ্লাদ নাচগান, রগড় রহস্য দেখিতাম। মনোমোহিনীর শয়ন শয্যায় এক পার্শ্বে চুপ করিয়া বসিয়া প্রমোদ কুঠুরীর সমুদয় অবস্থা দেখিতাম। ...হল কামরায় প্রায়ই বাতি থাকে না।... থাকিলেও এক কোণে সামান্য। ঘরের মধ্যে আসিয়াই দেখি সম্মুখে মোহিনী মূর্তি। সে-ই একপ্রকার স্নেহে আমার হাত ধরিয়া বুকে বুকে স্পর্শ করিয়া মুখের উপর সেই মোলায়েম সুগন্ধিযুক্ত গন্ডস্থল রাখিয়া আমায় কয়েকটি কথা চুপি চুপি বলিলেন- এবং আমার হাতে কয়েকটি পানের খিলি দিয়া বলিলেন, ফেলিও না, মার খাইবে। বেত লাগাব। আমি দেখিব। ওখানে বসিলেই দেখিতে পাইব, তুমি ফেলিয়া দিয়াছ কিনা।"... সুতরাং পদমদী নবাব-স্কুলে মীরের পড়াশুনায় অগ্রগতি হতে পারে না। হয়ও নি। কমবেশি এক বছরের মধ্যেই পদমদীতে মীরের পঠনকাল সমাপ্ত হয়। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরের সূচনায় পিতার নির্দেশে মীর সাহেব চলে আসেন কৃষ্ণনগরে। এখানে ষোল বছর বয়সে, 'উতলা যৌবনে' ভর্তি হন কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে।... "কলেজে ভর্তি হইলাম। কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে।" তখন কৃষ্ণনগর কলেজের অধ্যক্ষ দিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত।
(নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।