বইটি হাতে নিয়ে এর প্রচ্ছদ দেখলেই পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠবে বন্ধুরা। বইয়ের প্রচ্ছদে আঁকা আছে ময়ূর, হাতি, শিয়াল, ইঁদুর ও পিঁপড়া। এই পিঁপড়াটির নাম পিকু। পিকু একটি কালো পিঁপড়া। কী করে এই কালো ছোট্ট পিঁপড়াটি বনের সবার বন্ধু হয়ে উঠল, সে গল্পই লিখেছেন নিশাত সুলতানা। ‘সবার বন্ধু পিকু’ ১৬ পৃষ্ঠার একটি রঙিন চকচকে বই। গল্পের সাথে আঁকা আছে চমৎকার সব ছবি, যা গল্পের সাথে মিল রেখে আঁকা হয়েছে। এ গল্পের মধ্যে একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, সেটা হলো―আকারে ছোট হলেও তার বুদ্ধি ও শক্তি অনেক সময় কাজে লাগে। তাই ছোটকে ছোট বলে অবহেলা করতে নেই। বনের সবচাইতে পুরনো আমগাছের গুঁড়িতে প্রায় দেড় মাস আগে জন্ম নেয় পিকু। অন্য পিঁপড়েদের মতো তারও দায়িত্ব পড়ে খাবার সংগ্রহ করার। কিন্তু পিকুর শুধু খাবার সংগ্রহ করে আর ভালো লাগে না। তার মন চায় বনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে। রানিমার কাছে সে এ কথা জানায়। রানিমাও তাকে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু বাইরের পৃথিবী অনেক কঠিন, এ কথা রানিমা পিকুকে স্মরণ রাখতে বলে। ঘুরতে ঘুরতে পিকুর সাথে দেখা হয় একটি ময়ূরের। সে ময়ূরের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। কিন্তু ময়ূর তাকে পাত্তাই দেয় না। এরপর সে শিয়ালের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। শিয়ালও তাকে না করে দেয়। হরিণকে পেয়ে পিকু তাকে বন্ধু হওয়ার আবেদন জানায়। কিন্তু হরিণ সে কথা কানেই নেয় না! সব জায়গা থেকে সে উপেক্ষিত হয়ে মন খারাপ করে যখন তার দুর্গের দিকে ফিরে আসছিল তখন সে বিকট আওয়াজ শুনতে পায়। একটা পাগলা হাতি বনের সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। সবাই যখন পাগলা হাতির তাণ্ডবে ভীত, ঠিক সে সময় পিকু সাহস করে হাতির শুঁড়ে গিয়ে বসিয়ে দেয় কামড়। কামড়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পাগলা হাতি কাবু হয়ে পড়ে। এই বুদ্ধি আর বীরত্বের কারণে সবাই পিকুকে বাহবা দিতে থাকে। সবাই তাদের ভুল বুঝতে পারে আর পিকুকে বন্ধু করে নেয়। বন্ধুরা, এখানেই কিন্তু গল্প শেষ নয়। মানে শেষ হয়েও হইল না শেষ। পুরো গল্পটি যখন বই হাতে নিয়ে পড়বে তখন আরো বেশি মজা পাওয়া যাবে।
নিশাত সুলতানা একজন বাংলাদেশী কলামিষ্ট, শিশুসাহিত্যিক ও মানবাধিকার কর্মী। কর্মজীবনে ’নিশাত সুলতানা’ নামে পরিচিত হলেও বাবা-মা, নিকটজন ও বন্ধুবান্ধবরা ’পূরবী’ নামেই ডাকেন। জন্ম উত্তরবঙ্গের নওগাঁ জেলায়। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নওগাঁ জেলা শহরে। পড়েছেন নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁ সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। বাবা এ,কে,এম, নূরুজ্জামান এবং মা সেলিমা বানুর দ্বিতীয় সন্তান তিনি। যদিও কর্মজীবনের শুরু ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে, পরবর্তীতে যুক্ত হন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে। তিনি কাজ করেছেন কনসার্ন ইউনিভার্সেল, সেভ দ্য চিলড্রেনের মত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে। বর্তমানে কর্মরত আছেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে। সাতাশতম বিসিএসে যোগদান করে তিনি সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কিছুদিন দায়িত্বও পালন করেন। শিশুদের জন্য অদ্ভূত সুন্দর একটা পৃথিবী নির্মাণ করতে চান তিনি। তাঁর রচিত শিশুতোষ বইগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ’নিপুর রঙিন একদিন’ ,’পুটুর বদলে যাওয়া’ ও ’কাক ও বকের একদিন’। পাঠক নন্দিত লেখিকা নিশাত সুলতানা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত।