"নজরুলের কবিতা সমগ্র "বইটির মূখবন্ধ: অগ্নি-বীণা-র প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনাটি চিত্রকর-সম্রাট শ্ৰীযুত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, এবং এঁকেছেন তরুণ চিত্রশিল্পী শ্ৰীবীরেশ্বর সেন। এজন্য প্রথমেই তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা নিবেদন করছি। ‘ধূমকেতু'র পুচ্ছে জড়িয়ে পড়ার দরুন যেমনটি চেয়েছিলাম তেমনটি করে অগ্নি-বীণা বের করতে পারলাম না। অনেক ভুলত্রুটি ও সম্পূর্ণতা রয়ে গেল। সর্বপ্রথম সম্পূর্ণতা, যেসব গান ও কবিতা দেবাে বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম, | সেইগুলি দিতে পারলাম না। কেননা সে সমস্তগুলি দিতে গেলে বইটি খুব বড় হয়ে যায়, তার পর ছাপানাে ইত্যাদি খরচ এত বেশি পড়ে যায় যে এক টাকায় বই দেওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। পূর্বে যখন বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম, তখন ভাবিনি, যে, সমস্ত কবিতা গান ছাপাতে গেলে তা এত বড় হয়ে যাবে, কেননা আমার। প্রত্যক্ষ-জ্ঞান কোনাে দিনই ছিল না, আজও নেই। এর জন্য যতটুকু গালি-গালাজ বদনাম সব আমাকে অকুতােভয়ে হজম করতে হবেই। তবু আমার পাঠক পাঠিকার নিকট আমার এই ত্রুটি বা অপরাধের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। বাকি কবিতা ও গানগুলি দিয়ে এবং পরে কতকগুলি কবিতার সমষ্টি নিয়ে এইরকম আকারেরই অগ্নি-বীণা-র দ্বিতীয় খণ্ড দিন পর মধ্যেই বেরিয়ে যাবে। আর্য পাবলিশিং হাউজ-এর ম্যানেজার আমার অগ্রজপ্রতিম শ্ৰীযুক্ত শরৎচন্দ্র গুহের ঐকান্তিক চেষ্টারই সাহায্যে আমি অগ্নি-বীণা কোনােরকমে শেষ করতে পারলাম; আরাে অনেকে অনেকরকম সাহায্য ও উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের সকলকে আমার শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।