"নজরুলের ছোটগল্প সমগ্র "বইটির প্রসঙ্গ কথা: কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি সর্বসাধারণের কাছে বিদ্রোহী কবি নামে অধিক পরিচিত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুঃশাসনে পরাধীন এ দেশের মানুষ যখন চরমভাবে নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতা আন্দোলন করছিল সেই সময়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটে। ঐ সময় কবির ‘বিদ্রোহী’, ‘প্রলয়ােল্লাস', ‘খেয়া পারের তরণী' ইত্যাদি কবিতা ‘শিকল-পরা ছল মােদের এ শিকল-পরা ছল’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু প্রভৃতি গান উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের উজ্জীবিত করে ও প্রবলভাবে অনুপ্রেরণা যােগায়। সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। এই অসাধারণ প্রতিভাবান কবি স্বীয় মেধা ও মননের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে তাঁর সৃষ্ট কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধশালী। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে (১৯১৯-১৯৪২) সর্বাধিক (তিন হাজারে অধিক) গানের রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম। এছাড়া অসংখ্য কবিতা, ১৮টি গল্প, ৩টি উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও আলােচনা লিখেছেন। কবি ও সংগীতস্রষ্টারূপে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি একাধারে সংগীত-রচয়িতা, সুরকার, সংগীত-প্রশিক্ষক, সংগীত পরিচালক ছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক খ্যাতিমান সংগীত পরিচালকের বাধা উপেক্ষা করে চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব প্রদান করেন। কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক। নজরুল তাঁর সাহিত্যে হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, দর্শন, দেশাত্মবোেধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম চিন্তা, সকল কিছু এক ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করেছেন। তিনি হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান-জৈন-বৌদ্ধ-শিখ ও পারসিক ধর্মসম্প্রদায়-নির্বিশেষে সকল মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে তাদের অন্তর্জীবনের ব্যথাবেদনাকে ও বহির্জীবনের সমস্যাকে ভালবাসা দিয়ে অনুভব করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের ছােটগল্পের বই তিনটি—ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’ ও ‘শিউলিমালা'। ব্যথার দান' প্রকাশ করে মােসলেম পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্কোয়ার, কলিকাতা, ১৩২৮ বঙ্গাব্দে। দু'বছর পর প্রকাশিত হয় রিক্তের বেদন। প্রকাশ করে ওরিয়েন্টাল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশিং লিমিটেড, হ্যারিসন রােড, কলিকাতা। ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে ‘শিউলিমালা প্রকাশ করে ডি. এম. লাইব্রেরি, ৬১
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।