বনখালি গ্রামে আতঙ্কের নাম কানা দস্যু। এই কানা দস্যু আজ চাঁদা চায় তো কাল কাউকে অপহরণ করে। কানা দস্যু নাম শুনতেই রক্ত ঠান্ডা হয়ে আসে গ্রামবাসীর। ভয়ে কেউ কানা দস্যুর নাম মুখে আনে না। অবাক ব্যাপার হলো কানা দস্যুকে কেউ চিনেও না। অথচ তার দাবি মতো চলতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে। কেউ অমান্য করলে তার জীবন অশান্তিময় হয়ে ওঠে। এই কানা দস্যুকে ধরতে বনখালি গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিশির আর লেলিন। গ্রামে পা রাখতে বুঝতে পারে গ্রামের জীবন স্বাভাবিক নেই। সম্পূর্ণ গ্রাম যেন এক মৃত্যুপুরী। তার উপর নেই ইলেকট্রিসিটি, মোবাইল নেটওয়ার্ক। পৃথিবীর কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন কী, থাকার জায়গাও নেই। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে, কানা দস্যু সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে চায় না। আর কীভাবে যেন কানা দস্যু সব আগে থেকেই জেনে যায়। যেমন জেনে গেছে তাদের আগমন এবং উদ্দেশ্যের কথা। তাই তো চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, শিশিলিনের সদস্যরা যদি ফিরে না যায় তাহলে করুণ মৃত্যুবরণ করতে হবে তাদের। কিন্তু শিশির আর লেলিন নাছোড়বান্দা। তারা ধরবেই কানা দস্যুকে। কিন্তু বাস্তবতা যে বড় কঠিন! কানা দস্যুর ছায়াও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের নাকের ডগায় একটার পর একটা অপরাধ করে যাচ্ছে কানা দস্যু। এখন তারাই বিপদগ্রস্ত, যে কোনো সময় খুন হতে পারে তারা। শেষ পর্যন্ত কী শিশিলিনের দুই ক্ষুদে গোয়েন্দা ধরতে পেরেছিল কানা দস্যুকে? নাকি তাদের করুণ মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল ভয়ংকর কানা দস্যুর হাতে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।