আই.কিউ জীবন সফলতায় বড়জোর ২০ পার্সেন্ট ভূমিকা রাখে। বাকীরা নির্ভর করে অন্যান্য উপাদান বিশেষ করে ‘আবেগীয়। বুদ্ধিমত্তা বা ইমােশনাল ইনটেলিজেন্স-এর উপর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হাওয়ার্ড গার্ডনার সর্বপ্রথম এই প্রচলিত আইকিউ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটি বুদ্ধিমত্তা মাপার একটি সংকীর্ণ ধারণা, বুদ্ধির দক্ষতা ও সক্ষমতার যে বিশাল ক্যানভাস বা ব্যাপ্তি সেটিকে অস্বীকার করে। তাই ব্যক্তির দক্ষতা ও সক্ষমতার বিশাল ব্যাপ্তিকে অনুসন্ধান করা, এর চর্চা করাই হবে সাফল্যের মুল চাবিকাঠি। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য হলাে : আত্মসচেতন থাকা, মুড ম্যানেজ করতে পারা, অনেকের প্রতি সহমর্মী হতে পারা। (এমপ্যাথী) সম্পর্কগুলাে ম্যানেজ করতে পারা এবং সেলফমটিভেশন, আবেগের উপর কর্তৃত্ব আনতে পারলে বুদ্ধি প্রজ্ঞায় রূপান্তরিত হয়। আর সেই প্রজ্ঞা আমাদের চিন্তা, মূল্যবােধ ও আমাদের অস্তিত্বকে সঠিক পথে গাইড করে। ব্রেইনে রয়েছে। অবুঝ শিশু- ‘এমাগডেলা’- যা নিজের ইচ্ছেমতােন, আবেগীয় তাড়না কাজ করতে চায়। আবার রয়েছে সুবিচারক বাবা- “প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’- যা অনিয়ন্ত্রিত, অবাঞ্চিত ও ক্ষতিকর আবেগীয় তাড়নাকে বশে আনে। প্রথাগত একাডেমিক বুদ্ধিমত্তাকে বাড়ানাের তেমন সুযােগ নেই। কিন্তু আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বাড়ানাের রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা, তা আমাদের সাধারণ আইকিউ যে মাপেরই হােক না কেন এ জন্যই অনেক উচ্চমেধাবীও গড়পড়তা বুদ্ধির মানুষের অধীনে চাকরি করে। অনেক গড় মানের মানুষ সমাজে তারকা বনে যায়। এই বইটিতে কিভাবে আবেগীয় বুদ্ধি বাড়ানাে যায়, কিভাবে একাডেমিক ফলাফল যেমন হােক না কেন, নিজের দক্ষতা, সক্ষমতার ব্যাপক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে ও সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় সে সবের বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল আলােচনা করা হয়েছে। তাই সর্বস্তরের মানুষ, পরিবার-সমাজের প্রতিটি মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে সফলতা অর্জনসহ নিজের জন্য একটি গৌরবের ও সম্মানের উচ্চস্থান নিশ্চিত করতে এই বইটি সহায়ক গাইড হিসেবে কাজ করবে।
অধ্যাপক ডা. মােঃ তাজুল ইসলাম একজন সাইকিয়াট্রিস্ট (মনােরােগ বিশেষজ্ঞ)। জন্ম : চাঁদপুর জেলার মতলব থানাধীন পশ্চিম বাইশপুর (বালুচর)। গ্রামে। পিতা : দেওয়ান আবদুল খালেক। তিনি মতলবগঞ্জ হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ১৯৯২ সালে সাইকিয়াট্রিতে উচ্চতর এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অধ্যাপক হিসেবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কর্মরত রয়েছেন। মানসিক রােগের চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য হু-এর ফেলােশিপ অর্জন করেন ব্যাংকক, থাইল্যান্ড থেকে। পরবর্তী সময় আরাে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জাইকা ফেলােশিপ পান জাপান থেকে। মনােসামাজিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্বাস্থ্য সাময়িকীগুলােতে যেসব মনোেরাগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ লিখে আসছেন, তিনি তাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। তার মনের সুখ মনের অসুখ ও ‘মানসিক সমস্যা : ধরন কারণ ও প্রতিকার’ ‘শিশুবিকাশ-১, ২, ৩’, ‘টিন-এজ মন : সমস্যা ও সমাধান, ‘উদ্বেগ-টেনশন : মনােবৈজ্ঞানিক সমাধান, ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদাবােধ : সবল ও মজবুত করার মনােবৈজ্ঞানিক কৌশল” শিরােনামের মনােবিজ্ঞানের বইগুলাে ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ডাক্তার ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি ইংরেজি ম্যানুয়েলও তিনি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তার অনেক মৌলিক গবেষণা-কর্ম রয়েছে। এখনাে লেখালেখি ও গবেষণা কর্মে নিজেকে নিয়ােজিত রেখেছেন। তিনি এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক।