‘নির্বাচিত কিশোর রচনা’ বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথাঃ রবীন্দ্রনাথ : সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা তিনি। তাঁর অমূল্য সাহিত্য ভান্ডারের মাধ্যমে শুধু আমাদের এই উপমহাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বকে আলোকিত করেছেন। তিনিই প্রথম বাঙালি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি ও সাহিত্যিক। তাঁর অমর সৃষ্টিগুলো যুগের পর যুগ পাঠকমহলে সমাদৃত হচ্ছে। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত তিনি। ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ পিতামাতার চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠতম। জন্ম জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। শৈশবে মাতৃহারা হয়েছিলেন শিশু বয়সে। যখন স্কুলে যাওয়ার সময় হয়নি তখনই তিনি স্কুলে যাওয়ার জন্য কাঁদতেন। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই স্কুলকে অপছন্দ করতে শুরু করেন। স্কুলে গিয়ে আনমনা হয়ে থাকতেন। ঐ সময়টাতেই লেখালেখি শুরু, অল্প বয়সে রচনা করেন অসংখ্য গান, কবিতা আর ছড়া। ছোটদের জন্য লিখতে আরম্ভ করেন বাংলা ১২৯২ সালে, বালক পত্রিকায়। এই সময়েরই অনেক কবিতা ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল, সোনার তরী ইত্যাদিতে ছড়িয়ে আছে। কড়ি ও কোমল গ্রন্থে ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ‘সোনার তরী’, ‘দুই পাখি’ শিশুদের জন্যে অসাধারণ সৃষ্টি। ছেলেবেলায় সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশেই প্রতিপালিত হন তিনি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল সে-সময়ের বিদ্যোৎসাহী ও শিল্পোৎসাহী সমাজে অন্যতম। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসাধারণ গুণের অধিকারী। একপলকেই লিখে ফেলতে পারতেন অসাধারণ সব কবিতা। তাঁর কালজয়ী শিশুসাহিত্যের মধ্যে রয়েছে বলাই, ছুটি, ভোলানাথ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ যখন যে বয়সের পাঠকের জন্য লিখেছেন তখন তিনি নিজেকে সে বয়সে নিয়ে গেছেন। তাঁর লেখা পড়লে তেমনটাই মনে হয়। শিশু, কিশোর, যুবা, বৃদ্ধ সকলেই তাঁর পাঠক। বাংলা ছোটগল্প রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই এগোতে থাকে। তার ছোটগল্প বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদরূপে বিবেচিত হয়। গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্য, পালতোলা নৌকার সারি, প্রকৃতি এবং প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা মানুষের জীবনযাপন—এসবই রবীন্দ্রনাথের গল্পের বিষয়। প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয় ১২৮৪ সনের শ্রাবণ মাসে ভারতী পত্রিকার ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যায় গল্পটির শিরোনাম ভিখারিনী। সাপ্তাহিক হিতবাদী পত্রিকা এবং সাধনা পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পেয়ে রবীন্দ্রনাথ যেন হাত খুলে গল্প লিখতে শুরু করেন। তখন থেকেই অবিরাম গল্প লেখা চলতে থাকে। সব্যসাচী এই সাহিত্যিক বাংলা শিশু ও কিশোর নাট্য-সাহিত্যের জগতে যে-পথ দেখিয়েছিলেন, সেই পথকেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় আরো মসৃণ করেছেন। বাংলায় প্রথম শিশু-নাটক প্রকাশিত হয় বালক পত্রিকার পৃষ্ঠায়। নাটকটির নাম মুকুট। মুকুট মঞ্চায়িত হয়েছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই। শিশুদের জন্য নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অগ্রণী ভূমিকা স্মরণযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের শিশু এবং কিশোর-সাহিত্যের বিশাল ভান্ডার থেকে কিছু লেখা একসঙ্গে মলাটবন্দি করাই ছিল আমার কাজ এটুকু করতে পেরেই আমি আনন্দিত। আপনাদের ভালো লাগবে বলেই বিশ্বাস। ১১ জানুয়ারি ২০১৯ জহিরুল আবেদীন জুয়েল নাখালপাড়া, ঢাকা
মােজাম্মেল হক নিয়ােগী। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সুরাশ্রম গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা ফজলুল হক নিয়ােগী বিমান বাহিনীর সৈনিক ছিলেন। মা সুফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিনী। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তৃতীয়। শতাধিক বইয়ের রচয়িতা কঠোর পরিশ্রমী লেখক। স্বভাবে কোণঘেঁষা। নিভৃতচারী। বহুমাত্রিক লেখক। লেখার বিষয়ও বহুমাত্রিক: জীবনবােধ, লােকজ সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষাআন্দোলন, বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। প্রান্তিকী, জলের লিখন, ফাঁদ, কালবাতাস, কুহেলীকুহক, ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসর কাবিন, ছায়াপথ, অরণি, অ্যাকোরিয়ামের মীনকন্যা, শেষ কথাটি যাও বলে ইত্যাদি উপন্যাস সমাজবাস্তবতার জীবন্ত দলিল। সত্তরের অধিক শিশুসাহিত্যের বই। বত্রিশের সবুজ পাতা, শরণার্থী শিবির থেকে, আগুনঝরা দিনগুলাে, রাজুদের বাড়ি আসার পর, ছােট মামা উল্লেখযােগ্য কিশাের-কিশােরী উপন্যাস। চৌদ্দটি গানের সুরমঞ্জরিত হয়েছে। কৃষ্ণপক্ষের জোছনা ও ‘গন্তব্য' নামে দুটি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক একাডেমিক বই আটটি এবং এগুলাের মধ্যে দুটি বই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই। ইংরেজি ভাষাতে লেখা ও অনূদিত বই রয়েছে কয়েকটি। তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (সমাজকল্যাণ, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও শিক্ষা)। চাকরি করেছেন সিসিডিবি, আইসিডিডিআর,বি, কেয়ার বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউনেস্কোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে ব্রিটিশ কাউন্সিলে কর্মরত।