স্বর্গ নামে ঢাকা শহরের একজন শিক্ষিত গৃহবধু এই উপন্যাসের মূল চরিত্র। একান্নবর্তী পরিবারে থেকে তার জীবন তিক্ত। মাইগ্রেনের জন্যে এম, আর, আই করাতে গেলে, অমায়িক চেহারার টেকনিশিয়ান প্রস্তাব করে যে সে বিশেষ ধরণের এম, আর, আই করে স্বর্গের শ্বশুর বাড়ির সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারবে। সেটা করানাের পর স্বর্গ নিজের অজান্তেই বদলে যায়। তার শ্বশুর বাড়ির সমস্যা সাময়িকভাবে মিটে যায়। কিন্তু তার জীবনে শুরু হয় রহস্য, বিপদ, এবং ভুল-শুদ্ধের দ্বন্দ। অনেক নতুন চরিত্র আসতে থাকে। কাকে বিশ্বাস করা যায়, কে ক্ষতি করবে, স্বর্গ বুঝতে পারে না। তাকে সাহায্য করার মতাে কেউ নেই। কিন্তু তারপরেও সে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে ফেলে। গল্পটি খুব আকর্ষণীয়ভাবে মিয়ানমারের স্ত্র-উ সিটির কাছে শুরু হয়। অন্ধকার রাস্তায় ভীত সন্ত্রস্ত রােহিঙ্গা স্কুল মাস্টার জয়নালের কাছে এক সুবেশী ভদ্রলােক এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়। জয়নাল সাইক নামের সেই বিদেশির মতাে বাঙালি লােকটির সঙ্গে বড় একটা প্লেন জাতীয় যানে উঠে পড়ে। একটা যন্ত্রের ভেতরে ঢােকার পর তার পক্ষপাত বদলে যায়। একই তথ্য, একই ঘটনাকে জয়নাল এবার অন্য আঙ্গিকে দেখতে শুরু করে। তার সাময়িক শান্তিও হয়। কিন্তু পক্ষপাত বদলে যাওয়ার কারণেই সে বিপজ্জনক কাজে জড়িয়ে পড়ে। আমেরিকা সহ বেশ কয়েকটি দেশ পুরাে ঘটনাটিকে খুব গুরুত্বের সাথে পর্যালােচনা করে। সেই চক্রটি, যারা মেশিন দিয়ে মানুষের পক্ষপাত’ বদলে দিচ্ছে, তাদেরকে ধরার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু হয়। এক সময় তদন্ত কমিটির প্রধান নেইট নিমির মাথায় ব্যাপারগুলি দুই-দুই চারের মতাে মিলে যায়। কে করছে, কীভাবে করছে, কেন করছে, সব বেড়িয়ে আসে। এই বইটিতে রয়েছে সুগভীর মনস্তত্ব। বইটি পড়ার পরে পাঠকের চিন্তা খানিকটা হলেও আলােড়িত হবে। এক নিঃশ্বাসে পড়ার মতাে একটি অত্যন্ত উপভোেগ্য উপন্যাস, ভুল স্বর্গ।
মোস্তফা তানিম লেখালেখি করছেন দুই দশক ধরে। বাংলাদেশের যে স্বল্প সংখ্যক লেখক সায়েন্স ফিকশন লিখে পাঠকের মনোযোগ কেড়েছেন, মোস্তফা তানিম তাদেরই একজন। লেখক-তীর্থভূমি হিসেবে খ্যাত ''কচি কাঁচার আসর'' দিয়ে তার লেখক জীবনের সূচনা। নব্বই দশকে পত্রিকার জন্য দুই হাতে লিখেছেন। লেখালেখির মতো তার পেশাও ভীষণভাবেই বিজ্ঞানকেন্দ্রিক। বুয়েটে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একটি মার্কিন আই,টি, কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। বিজ্ঞান তার একটা প্রিয় বিষয়, তার লেখায় সেটার স্পষ্ট ছাপ পড়েছে। বিজ্ঞানের সাথে কলার বিরোধ আছে। মোস্তফা তানিম অসামান্য দক্ষতায় সেই বিরোধ সামলান তো বটেই, মাঝে মাঝে দু'টোকে বেশ দারুনভাবে সমন্বয় করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ন'টি।