সাদত হাসান মান্টোর বিখ্যাত গল্প ‘ঠান্ডা গোশত’। দেশভাগের পর একরকম মানসিক বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাকিস্তানে এসে গল্পটা লিখেছিলেন। গল্পটা প্রকাশ হতেই পুরো পাকিস্তানে হইচই পড়ে যায়। আদালত অবধি যেতে হয় মান্টোকে। সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা। সাহিত্যে শ্লীল-অশ্লীল কী? বা শিল্প আদৌ অশ্লীল হয় কি না তারই দীর্ঘ আলাপে ‘অবিরাম ব্যথার কিছু কথা’ শিরোনামে ৪২ পৃষ্ঠার একটি লেখা লিখেন তিনি। পরে এটিকেই ভূমিকা ও ঠান্ডা গোশত-এর সঙ্গে আরো সাতটি গল্প যোগ করে ঠান্ডা গোশত নামে স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গভাবে যে বইটি রচনা করেন তারই অনুবাদ এটি। মান্টো মানুষের যাপিত জীবনে যে নিগূঢ় প্রোথিত সত্যটি রয়েছে তাই স্পর্শ করতে চেয়েছেন গল্পে। জীবনবাদী সাহিত্য-শিল্পী ‘মান্টো’ যেন একটি তীব্র যন্ত্রণামুখর এবং অস্থির অগ্নিকু-ের মতো। ধিকিধিকি জ্বলে একদিন নির্বাপিত হয়েছিলেন আমাদের অজান্তে। কিন্তু যে দর্শন ও প্রতিটি লেখায় চরম মনস্তত্ত্বের যে খেলা তিনি এঁকে দিয়ে গেছেন, তা আমাদের ভাবিত করে। মানবজীবনে আমাদের স্বভাবজ কুটিল মিথ্যাশ্রয় ও সত্যকে ভাগাড়ে ঠেলে দেওয়ার যে করুণ বদঅভ্যাসটি, তার শেকড়মূলেই আঘাত করেছেন মান্টো। সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রশাসনের খামখেয়ালি এসব তাকে তাড়িত করেছে যথাযথভাবে। তাই নিছক গল্প বলতে নয়, কালের মহাসত্যকে ফুটিয়ে তুলতেই গল্পের নামে জীবনবোধকে এঁকে গেছেন। তাই আমরাও তার রচনার কাছে এসে বিস্মিত হই।