"গ্রীকপুরাণ কথা" বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে নেওয়া:গ্রীকপুরাণের প্রথম দিকে দেবরাজ জিয়াস ও অন্যান্য দেবদেবীদের জন্মকথা, স্বরূপ ও চরিত্রমাহাত্ম বর্ণিত হয়েছে। পরে হার্কিউলেস, পার্সিয়াস, থিসিয়াস, জেসন প্রমুখ অসমসাহসিক বীরদের অসাধারণ পৌরুষ ও বীরত্বকাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু গ্রীকপুরাণের যে আখ্যানভাগে অসংখ্য কাহিনীর মধ্যে মানব-জীবনের যে কথা ও কাহিনী স্থান পেয়েছে সেই আখ্যানভাগটিতে অপরিহার্য নিয়তির বা দৈববিধানের এক অলঙ্নীয় প্রভাব ব্যাপ্ত হয়ে আছে। তাই দেখা যায় মানুষ বাহুবলে ও বুদ্ধিবলে যত বীরত্বই অর্জন করুক না কেন দৈববলে বলীয়ান না হলে বা দৈব অনুগ্রহ লাভ করতে না পারলে সে চূড়ান্ত জয় বা সাফল্যের স্বর্ণমুকুট কখনই লাভ করতে পারবে না জীবনে। মানুষের জন্মকালে নিয়তিদেবীরা যেভাবে নবজাতকের জীবন সম্পর্কে একটি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেন, কোন মানুষই সেই পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে তার জীবনকে অন্যভাবে গড়ে তুলতে পারেনি। শত চেষ্টাতেও ঈডিপাসের মত বীর, বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান পুরুষ নিয়তিনির্দিষ্ট অভিশপ্ত জীবন-পরিণতিকে পরিহার করতে পারেনি। যে অমােঘ অলক্ষ্য শক্তি মানুষের জীবনকে বিচিত্র ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায় সে শক্তিকে জয় করতে পারে না কোন মানুষ। তঙ্কালীন গ্রীক জীবনদর্শন প্রধানতঃ এই নিয়তিবাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এই নিয়তিবাদ অসংখ্য মানবজীবনের গতিপ্রকৃতির মধ্য দিয়ে স্বীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গ্রীকপুরাণের কাহিনীগুলির মধ্যে তৎকালীন সমাজব্যবস্থারও এক অভ্রান্ত প্রতিফলন পাওয়া যায়। সেকালের গ্রীকসমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক এবং সে সমাজে পুরুষদের মধ্যে বহু বিবাহপ্রথা প্রচলিত ছিল। তবে বিধবা নারীদের পুনর্বিবাহের ব্যাপারে কোন সামাজিক সম্মতি ছিল না। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় হিন্দু নারীদের মত অনেক গ্রীক নারী বা প্রেমিকা স্বামী বা প্রেমিকের মৃত্যুতে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণত্যাগ করে তার অনুগামিনী হয়েছে। হিরাে ও লেণ্ডারের মত প্রেমিক-প্রেমিকাদের সহমৃত্যু তাদের প্রেমকে দান করেছে এক মৃত্যুঞ্জয়ী মহিমা । ফাইলেউসকন্যা ঈভাদনে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় প্রাণ বিসর্জন দেয়। তবে এ বিষয়ে কোন প্রথাগত কঠোরতা